এক যুগ পেরিয়ে গেলেও জনতার দুর্ভোগ শেষ হয়নি

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৪২, অক্টোবর ১০ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ খালের ওপর ১৫ বছরের পুরোনো কেওড়া গাছের সাঁকো দিয়ে চলছে পারাপার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন ররগুনার পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটার বাসিন্দারা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রের পাশে এ খালটির অবস্থান। পাশের বিষখালী নদের শাখা খাল হওয়ায় প্রায় সর্বদাই পানিতে ভরে থাকে খালটি। এ খালের ওপর জরাজীর্ণ ওই সাঁকো পার হতে গিয়ে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। গত ১৫ বছর আগে এই খালে স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে সাঁকো তৈরি করেন। পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকোটি বর্তমানে এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাকে অনেকাংশে ব্যাহত করছে। খালের ওপর সেতু না থাকায় এ সাঁকোটিই এখানকার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। স্কুল, কলেজ, মাদরাসাগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ দুই পাড়ের গ্রামের চার থেকে পাঁচ হাজার বাসিন্দা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখান দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ মাছ শিকার করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। এ খাল পার হয়েই বিষখালী নদীতে যেতে হয় তাদের। মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত মালামাল মাথায় নিয়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই চলাচল করেন তারা। প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ সাঁকোটির পুরোটাই কয়েকটি কেওড়া গাছের খুঁটি দিয়ে তার ওপর কেওড়া গাছ দেয়া রয়েছে। দেখা গেছে কিছু কিছু খুঁটি পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সাঁকোতে উঠলে থরথর করে কাঁপতে থাকে। ফলে এ সাঁকো দিয়ে মানুষ ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। অনেক বৃদ্ধ ও শিশুরা উপরে দেয়া গাছ ধরে ভয় ও শঙ্কা নিয়ে পার হচ্ছেন। সাঁকোটির উত্তর পাশে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও মক্তবসহ উপজেলার একমাত্র পাথরঘাটা বাজারে এখান দিয়েই যেতে হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ দিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এর প্রতিকার চাইলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। শুধু নির্বাচন এলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শেষ করেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দা আবু জাফর, ইয়াছিন আকনসহ বেশ কয়েকজনে জানান, আমাদের এ এলাকার মানুষের একমাত্র যাতায়াতের পথ এই সাঁকো। এই সাঁকো পার হতে গিয়ে প্রায়ই পথচারীদের খালে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিছু দিন আগে বিষখালী নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় খালের মধ্যে সাঁকো ভেঙে পড়ে যান স্থানীয় কিছু লোক। এ সময় অন্য লোকজন থাকায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান তারা। তারা বলেন, ‘আমাদের বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য সাঁকো পার করে দিতে হয়, না হলে কখন পড়ে বিপদ হয়। বাচ্চারা অনেক সময় সাঁকোর কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। কথন বয়স্ক কেউ আসে সেই অপেক্ষায়!’ তারা জানান, নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিদের চোখে পড়ে আমাদের এই সাঁকোটিতে, তখন সবাই ব্রিজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু নির্বাচন গেলে আমাদের কথা ভুলে যান তারা। ‘আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি বড় কোনো কর্মকর্তার নজরে এলে এবং আমাদের এই খালের ওপর ব্রিজটি করে দিলে সাধারণ মানুষ বড় বিপদ থেকে রেহাই পেতে পারে’, বলেন তারা। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: আব্দুস ছত্তার এ প্রসঙ্গে জানান, ওই খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দাবি করে আসছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ বাস্তবায়ন অফিসে কথা হয়েছে। তারা এসে দেখে গেছে। এখানে একটি কালভার্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছি। মাটির নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে টেস্ট করার জন্য। এখানে একটি ব্রিজ করার প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কিছু একটা হবে।’