বরিশালে নৌ-দুর্ঘটনা বাড়লেও ৮৪ লাখ মানুষের জন্য ডুবুরি ৪ জন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় প্রায় ৮৪ লাখ মানুষের বসবাস। ১০ বছরের ব্যবধানে সেই জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
দেশের অন্য যেকোনো বিভাগের চেয়ে নদী-খালের এই জনপদে পানিতে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেশি। গত এক বছরের হিসেব বলছে, বিভাগে ১৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
উদ্বেগের কথা হলো, নদীপথে কর্মপরিধি বাড়লেও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও উদ্ধার অভিযানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বাড়েনি বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পুরো বিভাগে ৮৪ লাখের বেশি জনগোষ্ঠীর জন্য মাত্র চারজন ডুবুরি রয়েছে। আরও চারজন নিয়োগ পেলেও তারা কবে যোগদান করবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে চারজন ডুবুরি দিয়ে বিভাগের নৌ-দুর্ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চালানো অসম্ভব।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নদী ফায়ার স্টেশন অফিসার খোরশেদ আলম বলেন, চারজন সদস্য নিয়ে আমাদের পুরো বরিশাল বিভাগে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।
শুধু বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় নয়, বিভাগের বাইরের মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ থেকেও ডাক আসে। কখনও কখনও এক দিনে একাধিক জেলা থেকে ডাক আসে। তখন আমরা অসহায় হয়ে যাই। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মানুষের জীবন বাঁচাতে চারজন ডুবুরি দিয়েই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন রয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে বরিশাল ও পটুয়াখালীতে রয়েছে দুটি নদী ফায়ার স্টেশন।
এই দুটি স্টেশনের আওতায় রয়েছে দুটি হাইস্পিডবোট ও একটি ফায়ার ফাইটিং অগ্নিঘাতক বোট এবং চারজন ডুবুরি। বিভাগের অন্য কোনো স্টেশনে ডুবুরি নেই।
হাইস্পিডবোট দুটি ব্যবহৃত হয় ফায়ার ফাইটারদের বহনের জন্য। আর অগ্নিঘাতক নামের বোটটি ব্যবহার করা হয় আগুন নেভানোর কাজে।
যদিও আগুন নেভানোর বোট নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বর্তমান যুগের ফায়ার ফাইটাররা। এটি অটোমেটিক সিস্টেমের নয় বরং আলাদা পাম্প দিয়ে পানি তুলে আগুন নেভাতে হচ্ছে।
অথচ ফায়ার সার্ভিসের চাহিদা অনুসারে উপকূলীয়, দ্বীপ উপজেলা এবং আয়তন বিবেচনা করে কমপক্ষে ১০টি নদী স্টেশন দরকার এই বিভাগে।
এর মধ্যে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ, পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালি এবং ভোলা জেলা পুরোপুরি নদী বেষ্টি হওয়ায় এসব স্থানে পূর্ণ সক্ষমতাসম্পন্ন নদী স্টেশন স্থাপনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। প্রতিটি নদী স্টেশনে পর্যাপ্ত ডুবুরি, সরঞ্জাম ও যানবাহন থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক এবিএম মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নদী স্টেশনকে আরও শক্তিশালী করতে জনবলসহ বিভিন্ন আধুনিক সরঞ্জামের চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আশা করছি এগুলোও দ্রুত পাব। চাহিদা অনুসারে লোকবল ও সরঞ্জাম এলে মানুষের বিপদে, উদ্ধার অভিযানে আরও বেশি সফলতা অর্জন করতে পারবে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
তিনি বলেন, ডুবুরি সংকট নিরসনে প্রস্তাবনার অনুকূলে নতুন চারজন ডুবুরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের যোগদানের বিষয়টি নির্ধারণ হয়নি। এই কর্মকর্তা বলেন, বিগত ১০ বছরে ফায়ার সার্ভিসে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
নতুন নতুন প্রযুক্তি, সরঞ্জাম, যানবাহন প্রতিনিয়ত সংযুক্ত হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের ফায়ার ফাইটাররা বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করছেন। সরকার ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়নে যথেষ্ট আন্তরিক। নদীবেষ্টিত বরিশালের প্রতি জেলায় নদী স্টেশন ও ডুবুরি ইউনিটের কাজ চলমান রয়েছে।