তালিকায় নাম থাকলেও চাল পাননি হতদরিদ্ররা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:৩৮, সেপ্টেম্বর ২৯ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ খাদ্যবান্ধব (ফেয়ার প্রাইস) কর্মসূচির তালিকায় নাম থাকলেও হতদরিদ্ররা চাল পাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের ছয় হতদরিদ্র পরিবার ডিলার আবু জাফরের বিরুদ্ধে কার্ড রেখে চাল না দেয়ার অভিযোগ এনে বুধবার আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে গত জুলাই মাসের নির্বাচনের জের ধরে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উপজেলায় কয়েকশ’ হতদরিদ্রের নাম খাদ্যবান্ধব তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের কর্মী-সমর্থকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে উপজেলার অন্তত কয়েকশ হতদরিদ্র পরিবার সেপ্টেম্বর মাসে চাল পায়নি। খাদ্যবান্ধব তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে চালবঞ্চিত দরিদ্র পরিবারগুলো। দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, ২০১৬ সালে হতদরিদ্র পরিবারের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে পরিবারপ্রতি ৩০ কেজি চাল দেওয়ার জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু করে সরকার। ওই কর্মসূচির আওতায় আমতলী উপজেলায় ১৩ হাজার ২৪৫ জন উপকারভোগী চিহ্নিত করা হয়। বছরে মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর এই ৫ মাস ওই চাল বিতরণের জন্য উপজেলায় ২৪ জন ডিলার নিয়োগ দেয় উপজেলা প্রশাসন। গত ৫ বছর ধরে এ সুবিধা পেয়ে আসছে উপজেলার হতদরিদ্র ১৩ হাজার ২৪৫ পরিবার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুন মাসের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জের ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কয়েকশ’ হতদরিদ্র পরিবারের নাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা থেকে বাতিল করে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে বিপাকে পড়েছে উপজেলার চালবঞ্চিত দরিদ্র পরিবারগুলো। এদিকে গুলিশাখালী ইউনিয়নে দুই হাজার ২৮০ হতদরিদ্রদের নাম খাদ্যবান্ধব তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে কলাগাছিয়া গ্রামের ৫২০ পরিবার গত পাঁচ বছর ধরে এ সুবিধা পেয়ে আসছে। গত পাঁচ বছর ধরে ওই গ্রামের হতদরিদ্র জাকির মোল্লা, মোর্শেদা বেগম, হালিমা বেগম, সোহাগ মোল্লা, খাদিজা ও মামুন মোল্লার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর মাসে তাদের চাল দেয়নি ডিলার আবু জাফর। ডিলার মো. আবু জাফর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ও টাকা রেখে দিয়েছেন। বুধবার চালবঞ্চিত জাকির মোল্লা, মোর্শেদা বেগম, হালিমা বেগম, সোহাগ মোল্লা, খাদিজা ও মামুন মোল্লা ডিলার আবু জাফরের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাল না দেয়া ও কার্ড নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ইউএনও মো. কাওসার হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের হতদরিদ্র জাকির মোল্লা, মোর্শেদা বেগম, হালিমা বেগম, সোহাগ মোল্লা, ও মামুন বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে আমরা চাল পেয়েছি। কিন্তু এ মাসে ডিলার আবু জাফর তালিকায় নাম নেই বলে কার্ড নিয়ে চাল দেয়নি। হঠাৎ আমাদের নাম উধাও হয়ে গেছে। একই গ্রামের খালিদা বেগম বলেন, চাল দেওয়ার কতা কইয়্যা টাহা ও কার্ড লইয়্যা গ্যাছে ডিলার আবু জাফর কিন্তু চাল দ্যায় নাই। আগে চাল পাইতাম তাতে ভালোই চলতাম। মুই গরিব মানুষ ক্যামনে চলমু হেইয়্যা কইতে পারি না। ডিলার আবু জাফর ছয় পরিবারকে আগে চাল দেওয়ার কথা স্বীকার এবং টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, এখন তাদের নাম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে তাই আমি চাল দেইনি। কে তালিকা থেকে ছয় পরিবারের নাম বাতিল করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান বাতিল করে দিয়েছেন। কিন্তু গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি ছয় পরিবারের নাম তালিকা থেকে বাতিল করে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ডিলার আবু জাফরের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে বেশ অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ছয় হতদরিদ্র পরিবারকে ডিলার চাল দেয়নি বলে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি। গুলিশাখালী ইউনিয়ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সৈয়দ মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষটি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. কাওসার হোসেন বলেন, আমি বর্তমানে তালতলীতে আছি। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আগামীকাল আমতলী অফিসে গিয়ে বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।