আসামী গ্রেপ্তারের পরে তার ঘরে খাদ্য সহায়তা দিলো পুলিশ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:০০, আগস্ট ৩১ ২০২১ মিনিট

  নিজস্ব প্রতিবেদক ॥  মরিয়ম বেগম। একজন অসহায় গৃহবধুর নাম। এতো অসহায় না দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেনা। তিনি ৩ সন্তানের জননী। এই দরিদ্র মায়ের বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামে। স্বামী জাকির হোসেন ওরফে সুতা জাকিরের কারণে আজ তিনি অসহায়। ব্যবসার জন্য স্ত্রীকে জামিনদার করে মঠবাড়িয়া ব্রাক ব্যাংক থেকে জাকির হোসেন ২০ লাখ টাকা ঋণ নেয়। একে একে এই উপজেলার বিভিন্ন এনজিও থেকে আরও ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করে চতুর জাকির। গোপনে বিক্রি করে দেয় সব জমিজমা। পরে ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করে মঠবাড়িয়া থেকে পালিয়ে যায়। পরে জাকির ও তার প্রথম স্ত্রী মরিয়মের বিরুদ্ধে পিরোজপুর অর্থ ঋণ আদালতে এনজিওর পক্ষ থেকে মামলা রুজু করা হয়। মামলা নং-০৩/১৭। সেই সময়ে মরিয়ম বেগম মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে সাজানো সংসার ছেড়ে ৩ জন সন্তান নিয়ে নানা বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে থেকে অন্য মানুষের ঘরে ঘরে জিয়ের কাজ করে ও কাঁথা সেলাই করে সংসার চালাতে থাকেন। এ কাজে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা মরিয়ম বেগমের। তিনিসহ বড় মেয়ে শারমিন আক্তার (১৮), ছেলে রুম্মান (১১) ও ছোট মেয়ে জান্নাতি আক্তার সংসারের এ অবস্থায় কোনমতে বেঁচে আছেন। বেশির ভাগ দিনই মা এবং বড় মেয়ে ক্ষুদা নেই বলে ঘরে য়ে খাবার থাকে তা রুম্মান ও জান্নাতিকে খাইয়ে দিয়ে তারা দুজন অনাহারে থাকেন। এদিকে ওই মামলায় আদালত থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় স্বামী-স্ত্রীর নামে। স্বামীতো পলাতক। মরিয়ম বেগম আছেন মঠবাড়িয়াতেই। সোমবার ৩০ আগস্ট মঠবাড়িয়া থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক এসআই জেন্নাত আলী, উপ-সহকারী পুলিশ পরিদর্শক এএসআই জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও লাবনী আক্তার ওয়ারেন্টের আসামী মরিয়ম বেগমের বাড়িতে যান। তার বাড়িতে তাকে পেয়ে যান পুলিশের ওই টিম। তবে মরিয়ম বেগমের সংসারের অবস্থা দেখে মনের মানবিকতার ভিতরটায় নাড়া দেয় এএসআই জাহিদুল ইসলাম জাহিদের। মরিয়ম বেগমকে থানায় নিয়ে যাবার সময় তার সন্তানরা যখন কান্নারত অবস্থায় বলতে ছিলো আমরা এখন থাকবো কিভাবে, খাবো কি, ঘরেতো কিছুই নেই। আমাদের মাকে ছেড়ে দেন। মা কিছু করে নাই। এই কথা গুলো তখন এএসআই জাহিদের কানে বিষাদের সুরে বাজতে ছিলো। কি আর করার ওয়ারেন্টের আসামী। আদালতের আদেশ তামিল করতেই হবে। থানায় মরিয়ম বেগমকে রেখে মঠবাড়িয়া বাজার থেকে ওই পরিবারের জন্য এক মাসের চাল,ডাল,তেল,আলু, লবন, সাবান, পেয়াজ, মরিচ, হলুদ,চিনি, চাসহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা নিয়ে হাজির হন এএসআই জাহিদ হোসেন। এবিষয়ে তিনি এই অতিথি প্রতিবেদককে জানান, মরিয়ম বেগমের সংসারের যে অবস্থা। তার অবর্তমানে এই সংসারের আহার জোগার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই যতদিন মরিয়ম বেগম জেল হাজতে থাকবেন,ততদিন তার রেশন দিয়ে এই পরিবারকে তিনি সহায়তা করবেন। উল্লেখ্য পুলিশের এই অফিসার এর আগে বরিশালের বানারীপাড়া থানায় কর্মরত থাকার সময়ও বিভিন্ন সামাজিক কাজ ও অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ মানুষের কাছে সেবার ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে রেখেছিলেন।