বরিশালে দ্বিতীয় পারমাণিক বিদ্যুকেন্দ্রের জায়গা খুঁজছে সরকার

কামরুন নাহার | ০০:৫৬, ফেব্রুয়ারি ০৯ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জায়গা খোঁজার কাজ চলছে। দেশের প্রথম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প উৎপাদনে যাওয়ার পর দ্বিতীয়টির কাজে হাত দেবে সরকার। এই দ্বিতীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাকে কাজ দেওয়া হবে সে বিষয়টি এরইমধ্যে আলোচনায় এসেছে। তবে সরকারের দিক থেকে এখনও বিষয়টির ব্যাপারে কোনো চিন্তা-ভাবনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ, প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক যোগানের বিষয় নিশ্চয়তার দিকটাই প্রধান্য পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের জানান, ‘প্রথম বিদ্যুকেন্দ্র চালু হলে দ্বিতীয়টার দিকে এগিয়ে যাব। রূপপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে হাত দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে জায়গা খোঁজা হচ্ছে। যাদের দিয়ে নির্মাণ কাজ করানো হবে তারা উপযুক্ত জায়গা নির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’ রাশিয়ার প্রযুক্তি, অর্থায়ন ও কারিগরিসহ সার্বিক সহযোগিতায় পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিট চালু হবে আগামী ২০২৩ ও দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালে। রাশান ফেডারেশনের প্রযুক্তি এবং দেশটির আর্থিক, কারিগরিসহ সার্বিক সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর ৯০ ভাগ টাকা অর্থাৎ ৯১ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। এই প্রকল্পটির সার্ভিস লাইফ টাইম ধরা হয়েছে ৬০ বছর, তবে এটি ১০০ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা যাবে। এই প্রকল্প উৎপাদনে গেলে প্রথম ২০ বছর রাশিয়ার ঋণ পরিশোধের সময় পাবে বাংলাদেশ।’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় প্রকল্পটিও বাস্তবায়নে রাশিয়া আগ্রহ দেখিয়েছে। চীনসহ আরও দুই একটি দেশেরও এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে। তবে রূপপুরের ক্ষেত্রে যে ধরনের সুবিধা ও নিশ্চয়তা বাংলাদেশ পাচ্ছে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ কাজের জন্য যাদের সঙ্গেই চুক্তি হোক এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। কারণ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ ধরণের প্রকল্পে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার ও অর্থের দিকটাই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে চলেছে রাশিয়া। পাশাপাশি এই ধরণের প্রযুক্তিতে রাশিয়ার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। সব মিলিয়ে রাশিয়ায়ই সর্বাধিক প্রধান্য পাবে ওই সূত্রগুলো জানায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানায়, ভিশন ২০২১, এসডিজি ২০৩০ এবং ভিশন ২০৪১ এর লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালে ৪০,০০০ মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালে ৬০,০০০ হাজার মেগাওয়াট নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে একক জ্বালানি অর্থাৎ প্রাকৃতিক গ্যসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বহুমুখী জ্বালানি ব্যবহারকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে সরকার। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী রূপপুরের ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুই ইউনিট বিশিষ্ট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নের পর ২০৩১ সালের মধ্যে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি ইউনিটের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর পর ২০৪১ সালের মধ্যে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই ইউনিটের আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। সশ্লিষ্টরা জানান, সরকার উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার আওতায় দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করছে। এ লক্ষ্যে ’পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনের সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্পের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জায়গা খোঁজার কাজ চলছে। পটুয়াখালী ও বরগুনার কয়েকটি জায়াগায় সম্ভাবতা যাচাই করা হচ্ছে। এর পর বিদেশি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান যারা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাবে তারা পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দেখার পর স্থান নির্বাচন চূড়ান্ত করা হবে।