বরিশালে করোনা ইউনিটের বর্জ্য যাচ্ছে ভাঙারির দোকনে !

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৬:৪৬, এপ্রিল ১৬ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশালে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। মারনঘাতী করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মাস্ক, গ্লোভস, সিরিঞ্জসহ প্লাস্টিকের নানান বর্জ্য হাতবদল হয়ে যাচ্ছে ভাঙারি দোকনে। যা আবার পরিবহন করে পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানের ক্রেতার কাছে। এতে ঊর্ধ্বমুখি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একে অপরকে দুষছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশন। মেয়র বলছে, বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব হাসপাতালেরই। আর হাসপাতাল বলছে, নগর কর্তৃপক্ষের। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও সেবা দানকারী সংস্থার মধ্যে এই রশি টানাটানির মধ্যে নগরীতে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলছে। পরিসংখ্যান বলছে, পুরো বিভাগে চেয়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগী শনাক্ত হচ্ছে প্রায় চারগুণ। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বর্জ‌্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সমাধান না হলে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের করোনা ইউনিট ভবনের সামনে কয়েক টন বর্জ্য স্তূপ করে রাখা। এর মধ্যে আছে গ্লোভস, মাস্ক, বিছানার চাদর, সিরিঞ্জ, পানির বোতল, রোগীর পোশাক ও নানা প্লাস্টিক সামগ্রী। করোনা ইউনিটের সামনে থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করছিলেন ষাটোর্ধ্ব রহিম মিয়া । তার সঙ্গে নেই কোনো সুরক্ষা সামগ্রী, কিংবা অন্তত মাস্ক ও নেই। করোনা ইউনিটের এসব বর্জ্য তিনি কেন সংগ্রহ করছেন জানতে চাইলে রহিম মিয়া বলেন, ‘এহান দিয়া প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ আরও অনেক কিছু লইয়া ভাঙারির দোকানে নিয়া বেচি।’ যে ভাঙারির দোকানে তিনি এই বর্জ্য বিক্রি করেন, কথা হয় সে দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে। তারা বলেন, গ্লোভস ও প্লাস্টিক জাতীয় জিনিসগুলো কিনে নিয়ে আবার বিক্রি করা হয়। ঢাকার কাস্টমাররা নিয়ে যায়। ক্রেতা বা প্রতিষ্ঠানের নাম কী এমন প্রশ্নে তারা বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি। পাওয়া যায়নি দোকান মালিককেও। এই অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের বর্জ্য সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু গত বছর এই হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করার পর থেকে সিটি করপোরেশন বিনা ঘোষণায় বর্জ্য সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়। হাসপাতালটির তৎকালীন পরিচালক বাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হঠাৎ কেন বর্জ্য সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়া হলো, কেনই বা চালু করছে না তা একাধিকবার জানতে চাইলেও সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। তারা শুধু জানিয়েছে, হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য সংগ্রহ ও ধ্বংস করতে হবে। এর পর থেকেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের এসব বর্জ্য অপসারণ করার কথা। কিন্তু তারা তা করছে না। বর্তমানে আমরা মাটি খুঁড়ে এই বর্জ্যগুলো চাপা দেয়ার চেষ্টা করছি স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে।’ তিনি জানান, পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় ও করোনা ইউনিটে এখন রোগী বাড়ায় টনের পর টন বর্জ্য সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের আউটডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৌরভ সুতার বলেন, ‘এমনিতেই হাসপাতালের বর্জ্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তা যদি হয় করোনা আক্রান্ত রোগীর, সেগুলো তো আরও মারাত্মক ক্ষতিকর। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের। মেডিক্যালের বর্জ্য মেডিক্যালেই ধ্বংস করতে হবে। ওই বর্জ্য নিয়ে বর্জ্যের গাড়িগুলো সারা বরিশাল নগরীতে ঘুরবে। ওই বর্জ্য নিয়ে আমি নগরবাসীকে তো হুমকির মধ্যে ফেলতে পারি না।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন জেলা সি‌ভিল সার্জন ম‌নোয়ার হো‌সেন। তিনি ব‌লেন, ‘শুধু শের-ই-বাংলা মে‌ডিক্যালই না, এখন জেনা‌রেল হাসপাতা‌লের বর্জ‌্যও নি‌চ্ছে না সি‌টি কর‌পো‌রেশন। নিয়মানুযায়ী হাসপাতা‌লের বর্জ্য অপসারণ কর‌বে সি‌টি কর‌পো‌রেশনই। কিন্তু সেটা করা হ‌চ্ছে না। তিনি জানান, গেল বৃহস্প‌তিবার এক‌টি অনলাইন বৈঠকে এ বিষয়টি তোলা হয়। সেখানে ছিলেন বিভাগীয় ক‌মিশনার, সিটি মেয়র ও বিভাগীয় স্বাস্থ‌্য প‌রিচালক। ‘ওই বৈঠকেও মেয়র ম‌হোদয় সরাসরি ব‌লেছেন যে তিনি বর্জ‌্য নি‌তে পার‌বে না। বর্জ‌্য নি‌লে তার কর্মীরা আক্রান্ত হ‌বে। এখন কর‌পো‌রেশন বর্জ‌্য না নি‌লে কী করার আছে। এই সমস‌্যা সমাধা‌নে আমরা জোর চেষ্টা কর‌ছি‌। বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরিশাল নগরীতেই করোনা রোগীর সংখ্যা বেশি। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ গত ১৫ এপ্রিল এ বিভাগে ৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় শনাক্ত হয়েছে ৫২ জনের। সেই ৫২ জনের মধ্যে ৪৭ জনই সিটি করপোরেশন এলাকায়। চলতি মাসের শুরু থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত জেলায় শনাক্ত হয়েছে ৭৫০ জন করোনা রোগী, যার মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকার রোগী ৫৫১ জন।