নিত্যপণ্যের চড়া দামে নাকাল নিম্ন আয়ের মানুষ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:০৫, মার্চ ০৬ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কয়েক মাস ধরে বাড়তে থাকা চালের দাম এখনো পড়েনি। পাশাপাশি ভোজ্য তেল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনিসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামও চড়া। এছাড়া বেড়েছে মাছের দাম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এদিকে, প্রকৃতি থেকে শীত বিদায় নিলেও বাজারে এখনো উঠছে শীতের সবজি। তাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে সবজির দাম। বেশির ভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। তবে নতুন যেসব সবজি উঠছে, তার দাম কিছুটা বাড়তি। ঢেঁড়স, পটল ও করলার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবার নগরীর বাজার রোডের পুরান বাজার ও নগরীর বটতলা বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। ওই দুটি বাজারে প্রতি কেজি চিকন মিনিকেট চাল ৬২-৬৪ টাকায়, নাজির শাইল ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়, ভালো মানের বিআর-২৮ চাল ৫০-৫৪ টাকায়, পাইজাম ৪৮-৫০ টাকায় এবং মোটা গুটি ও স্বর্ণা চাল ৪৪-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৬ টাকায়। বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। এছাড়া খুচরা দোকানে মোটা দানার মসুর ডাল ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা ও চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা দরে। আদা ৮০ টাকা, রসুন (চিনা) ১২০ টাকা, আলু ২৫ টাকা ও পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে চালের চড়া দামে কোনো হেরফের হয়নি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। গত দেড় মাসে তেল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। একের পর এক জিনিসের দাম বেড়েই চলছে। কিন্তু বাড়েনি আয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্রেতাদের মতে, দামের এই লাগাম এখনই টেনে ধরা না হলে আসছে শবে বরাত, রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরে সীমিত আয়ের মানুষেরা পড়বেন মহাসঙ্কটে। দামের এই লাগাম টানতে হলে উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে তদারকিও। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। সরকারকে কঠোর হাতে অসাধু এসব ব্যবসায়ীকে দমন করতে হবে। এদিকে, খুচরা বাজারে শীতের সবজি ফুলকপি ২০ টাকা, শিম ২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ টাকা, শালগম ২০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, ধনেপাতা ৬০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, মটরশুঁটি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। গ্রীষ্মের আগাম সবজি ঢেঁড়স ৭০ টাকা, পটল ৭০ ও করলার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারের সবজি বিক্রেতারা জানান, সবজির দামে কোনো হেরফের হয়নি। বরং কয়েকটি শীতের সবজির দাম কমেছে। শীত বিদায় নিলেও বাজারে শীতের সবজি এখনো প্রচুর। তবে শীতের সবজির সরবরাহ কমে গেলেই সবজির দাম বেড়ে যাবে। এদিকে, গত দেড় মাস ধরে মুরগির দাম বাড়ছে। বিক্রেতাদের দাবি, পোলট্রি খামারে বাচ্চা মুরগির দাম বেড়ে যাওয়া এবং উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। পুরান বাজার ও বটতলা বাজারের দোকানে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫২০ টাকা, ব্রয়লার ১৪০-১৫০ টাকা, লেয়ার ও কক ২২০ টাকা, সোনালি বিক্রি হয়েছে ২৭০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০-৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৮৫০-৯০০ টাকা দরে। বাজারে তেলাপিয়া মাছ কেজি প্রতি ১২০-১৪০ টাকায়, পাঙাশ ১৫০ টাকায়, চাষের কই ২৫০ টাকায়, পোয়া ৫০০ টাকায়, মাঝারি সাইজের শোল ৪৫০ টাকায়, শিং ৭০০ টাকায়, রুই ও কাতল ৩০০-৩৫০ টাকায়, ছোট সাইজের চিংড়ি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরীর পুরান বাজারে কথা হয় মো. শিফাত নামে এক রিকশাচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে সদয়-পাতি ও ঘর ভাড়া দেয়া দায় হয়ে পড়েছে। চাল, তেল, চিনি, আদা, রসুনসহ সব জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। দু’বেলা সন্তানদের নিয়ে খেয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। নগরীর পুরান বাজারের খুচরা মুদি দোকানি নিউ আজাদ স্টোরের মালিক সৈয়দ আজাদ আহম্মেদ বলেন, ‘চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সামনে রমজান তাই দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘শুনেছি মিল মালিকদের দিয়ে চাল আমদানি করা হচ্ছে। যেই সর্ষের ভেতরে ভূত, সেই সর্ষে দিয়েই ভূত ছাড়ানো হচ্ছে। এতে আরও নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হয়েছে। জেলা বাজার কর্মকর্তা আবু সালেহ হাসান সরোয়ার বলেন, ‘মূল্য তালিকা টানানো, ক্রয় রশিদ প্রদান ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারগুলো প্রায়ই পরিদর্শন করা হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ফরিয়া পট্টি ও পেঁয়াজ পট্টির আড়তগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে বেশ কিছু দোকান ও আড়তে মূল্য তালিকা টানানো ও হালনাগাদে অনীহা দেখা গেছে। তাদেরকে মূল্য তালিকা টানানো ও হালনাগাদ রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাজার পরিদর্শেনর সময় কোন ক্রেতা আমাদের কাছে বেশি দাম রাখার অভিযোগ করেনি। এরপরও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার পরিদর্শন আরও জোরদার করা হবে।