উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:৫৩, ফেব্রুয়ারি ১৩ ২০২১ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ॥ করোনা মহামারি যখন ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে তখন হুট করেই সক্রিয় হয়েছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। প্রকৃতিতে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন তারা। দেশীয় ও বিদেশি উসকানি, প্রতিবেশী দেশে অস্থিরতা, বিএনপির নয়া কর্মসূচি ও ভেতরে ভেতরে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রস্তুতি এবং সরকারি দলের মাঠ দখলে রাখার তৎপরতা এই উত্তাপের উপকরণ। এতে বাড়তি জ্বালানি জুগিয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ এবং তাতে পুলিশের লাঠিচার্জ। গত ১২ মাস করোনা মহামারিতে স্থবির ছিল জনজীবন। রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সবখানে এর প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। তখন সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল বড় কর্মসূচি। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ওই সময় মানবিকতার নজির স্থাপন করেছে। এর মধ্যে চাপা পড়ে যায় সরকারের মুজিবর্ষের নানা কর্মসূচি ও বিএনপির চলমান আন্দোলন। জীবন বাঁচানোই মুখ্য হয়ে ওঠে সেসময়। আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন। আমরা দুর্বার গতি নিয়েই মাঠে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। এই করোনায় আমরা নেত্রীর নির্দেশে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এখন আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো করছি। এছাড়াও দলীয়ভাবে কর্মসূচি আছে, আগের মতোই মাঠে থাকবো। কোনো অপশক্তিকে শান্ত পরিবেশ অশান্ত করার সুযোগ দেয়া হবে না তবে এর মাঝে হঠাৎ করেই মাঠে নেমেছে বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দির তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দলটি। এছাড়া ছয় সিটি করপোরেশনে পরাজিত মেয়রপ্রার্থীদের নেতৃত্বে ছয় মহানগরে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশের ডাক দেন তারা। চট্টগ্রামে ১৩ ফেব্রুয়ারি, বরিশালে ১৮ ফেব্রুয়ারি, খুলনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি, রাজশাহীতে ১ মার্চ, ঢাকা মহানগর উত্তরে ৩ মার্চ ও দক্ষিণে ৪ মার্চ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বিএনপির এ কর্মসূচিকে ‘দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।   তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাবে। তবে বিএনপিকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হবে না। জনমানুষের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন আবার সহিংস হয়ে ওঠার অপচেষ্টা করছে, কিন্তু জনগণ সচেতন রয়েছে। কর্মসূচিতে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।’ বিএনপি-বিরোধীদল মাঠে সক্রিয় থাকুক। বিএনপি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। গ্রামে-গঞ্জে, জেলা-উপজেলায় তাদের অস্তিত্ব নেই। তাদের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা কর্মীবিহীন বিবৃতিনির্ভর দল হয়ে গেছে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে সভা-সমাবেশ, প্রতিনিধি সভা ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালনে মাঠে থাকতে হবে।’ এছাড়াও বিএনপি ও তার শরিকদের ভেতরে ভেতরে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার তৎপরতা লক্ষণীয়। বিএনপি জোটের শরিক কল্যাণ পার্টি ১৬ জানুয়ারি ধানমন্ডির একটি রেস্টুরেন্টে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। যেখানে বিএনপিসহ ১৮ দলের শরিক নেতাদের পাশাপাশি বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী ও সমমনা রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন। একে ঘিরে রাজনীতির মাঠে নানা আলোচনা শোনা যায়। এছাড়া মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান এবং আল জাজিরায় প্রকাশিত সংবাদে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের গন্ধ রাজনীতির অঙ্গনে ফের জোরেসোরে আলোচিত হচ্ছে। এসব নিয়ে বক্তৃতা, বিবৃতি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে উসকানি দেয়ার অভিযোগ করছেন অনেকে। অবশ্য এসব উসকানি বা উত্তপ্ত পরিবেশ ‘থোড়াই কেয়ার’ করছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ ও তার সরকারের যে দুর্বার গতি, তা কেউ রুখতে পারবে না। করোনা মহামারিতেও মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, খাদ্যসহায়তা প্রদান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৪২ ভাগ ধরে রাখা, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ ও মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের গতি ধরে রেখে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। গণসম্পৃক্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু  বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপি-বিরোধী দল মাঠে সক্রিয় থাকুক। বিএনপি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জে, জেলা-উপজেলায় তাদের অস্তিত্ব নেই। তাদের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা কর্মীবিহীন বিবৃতিনির্ভর দল হয়ে গেছে। যে কারণে তাদের ঘোষিত কর্মসূচি মাঠে মারা যাবে বলে আমার মনে হয়। ’   আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কর্মসূচি থাকে। আওয়ামী লীগও নিজস্ব গতিতে তার সাংগঠনিক কার্যক্রম ও নির্বাচন চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলেরও রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকতেই পারে। সেটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। আমরা আমাদের মতো করে সংগঠন গুছিয়ে নিচ্ছি। সাংগঠনিক কাজকর্ম করে যাচ্ছি। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পৌরসভা যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন, এখানে স্থানীয় ইস্যুতে বা মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের দ্বন্দ্বে কিছু কিছু জায়গায় বিশৃঙ্খলা হয়েছে। তবে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়নি। আমি মনে করি, বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি একেবারে নেই বললেই চলে। এ জায়গায় তারা তাদের কার্যক্রম কীভাবে কী করবেন, উনারাই ভালো জানেন।’ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন। আমরা দুর্বার গতি নিয়েই মাঠে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। এই করোনায় আমরা নেত্রীর নির্দেশে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। চিকিৎসা ও খাদ্যসহ নানা সহায়তা দিয়েছি। এ সময় দলীয় কাজে ধীরগতি এলেও ভার্চুয়ালি কিছু কর্মসূচি পালন করেছি। এখন আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো করছি। এছাড়া দলীয়ভাবে কর্মসূচি আছে, আগের মতোই মাঠে থাকবো। কোনো অপশক্তিকে শান্ত পরিবেশ অশান্ত করার সুযোগ দেয়া হবে না।’