গোলাপের দাম বেড়ে দ্বিগুণ, তবুও অখুশি চাষি

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:৪৫, ফেব্রুয়ারি ১৩ ২০২১ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ॥ ‘রোজ ডে’ উদযাপিত হয়েছে গত ৭ ফেব্রুয়ারি। ১৪ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে। ভালোবাসা দিবসে বাংলাদেশে যত গোলাপ বিক্রি হয় ততো ‘রোজ ডে’তেও বিক্রি হয় না। বছরের সবচেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রির দুটি দিনের একটি এই ১৪ ফেব্রুয়ারি। স্বাভাবিকভাবেই ভালোবাসা দিবসের এই দিনে গোলাপের দামও বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশে গোলাপের অভ্যন্তরীণ বড় উৎস সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ১০টির বেশি গ্রামে গোলাপ চাষ হয়। যার সুবাদে এটি গোলাপ গ্রাম নামেই পরিচিত। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এই গোলাপ গ্রামে গোলাপের দাম বেড়ে গেছে। যার প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়বে রাজধানীসহ সারাদেশে। এখানে প্রতি পিস গোলাপ ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে, যা দু-একদিন আগেও ৪ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে গোলাপ চাষিরা বলছেন, এবার প্রতি পিস গোলাপ ১০ টাকায় বিক্রি হলেও তা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। গত বছরও পাইকারি প্রতি পিস গোলাপ ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে এবার গোলাপপ্রতি কৃষকদের ঘাটতি দিতে হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকা। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে চাষিরা গোলাপ বাগান থেকে ফুল তুলছিলেন। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল সেখানে। বাগানে উপস্থিত কৃষকের কাছ থেকে অনেকে বেছে বেছে তাজা গোলাপ কিনছেন। তারা প্রতি পিস ১০ টাকাই কিনছিলেন। এছাড়া গোলাপ বাগানের পাড় ঘেঁষেই রয়েছে ফুলের দোকান। সেখানেও ১০ থেকে ১২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছিল গোলাপ। মৈস্তাপাড়া স্থানীয় গোলাপ আড়তে দিয়ে দেখা যায়, সেখানে গোলাপ পাইকারি সাড়ে ৮ থেকে ১০ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন চাষিরা। এ আড়তে গোলাপ কিনতে এসেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. শিশির হোসেন। তিনি পাঁচ বছর ধরে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গোলাপ গ্রাম থেকে ফুল কিনছেন। পরে সেগুলো সাভারের দক্ষিণ গৌরীপুরে বিক্রি করছেন। এবারও তিনি তাই করবেন। শিশির হোসেন বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এবার ৫০০ গোলাপ, ১০০ স্টিক ফুল আর ঘাসফুল একশ টাকায় কেনার টার্গেট আছে। গোলাপগুলো সিঙ্গেল বিক্রি করবো। আবার স্টিক ফুলের সঙ্গে দুটি গোলাপ ও ঘাসফুল দিয়ে ৫০ টাকা করে বিকি করি। মাথায় খোপা করেও বিক্রি করব।’ গোলাপ বাগানের মালিকদের সঙ্গে দরদাম করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একজনের গোলাপের বাগানে গেলাম। তিনি বললেন, ১০০ গোলাপ এক হাজার টাকা। আর ৩০০ পিস গোলাপ বা তারা এটাকে এক আঁটি বলেন, এক আঁটি কিনলে পড়বে ২ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে গোলাপপ্রতি ১০ টাকা বা তার কম পড়বে। তবে এখনও কিনিনি।’ গোলাপ তুলতে তুলতে শ্যামপুর গ্রামের চাষি আবুল হোসেন  বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে গোলাপ বাগান করেছি। আমরা প্রতিদিনই ফুল তুলি। কিন্তু এখন চলছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। তাই আজ ৩ হাজার ফুল কাটার টার্গেট রয়েছে। এখন প্রায় ২ হাজার ফুল কেটেছি। শুক্রবার আমি ১০ টাকা করে বিক্রি করছি। ক্ষেত থেকে এক জায়গায় ২০০, আরেক জায়গায় ৫০০ গোলাপ বিক্রি করেছি। এগুলো ১০ টাকা পিস বিক্রি করেছি। এর আগে গোলাপ ৪-৫ টাকা পিস বিক্রি করেছি। আজ ঢাকায় দাম বাড়ছে।’ একই গ্রামের গোলাপ চাষি মো. হানিফ মিয়া  বলেন, ‘গোলাপ আজ প্রতি পিস ১০ টাকা করে বিক্রি করছি। অন্যান্য দিন ৪, ৫, ৬ টাকা করে বিক্রি করেছি। আজ গোলাপের দাম বেড়েছে। তার পরও যতটুক বাড়ার কথা, তা বাড়েনি। প্রতিটি গোলাপ প্রায় ১২ থেকে ১৫ টাকা করে পড়ছে। সেই হিসাবে প্রতি পিস গোলাপে ৩ থেকে ৫ টাকা করে নাই। গত বছরের তুলনায় এবার গোলাপের বাজারও কম।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাষিরা পয়সাপাতি যা বিনিয়োগ করে, তা ১৪ ফেব্রুয়ারি ও ২১ ফেব্রুয়ারি যদি উঠাতে না পারে, দুইডা পয়সা লাভ না হয়, তাহলে সারা বছরই ধরা। বিশেষ করে এই দুইডা অনুষ্ঠানেই ফুলডা বেশি বিক্রি হয়।’ শ্যামপুরেই গোলাপ বাগানের পাশে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ছোট একটি ফুলের দোকান দিয়েছেন নজরুল ইসলাম। শুক্রবার তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই যে আমার দোকান। এটা টেম্পোরারি (ক্ষণস্থায়ী)। মূল দোকান অন্যটা, ওখানে আমার আব্বায় আছেন। এখন পর্যন্ত কত বিক্রি করছি সেটার হিসাব নাই। কম আর বেশি, বিক্রি আছেই। মাথার বেল ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি করছি।’ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর একেকটা গোলাপ শেষদিকে ৩০ টাকা করেও বিক্রি করেছি। আরও দাম বাড়বে।’