ফুল তোলার ধুম লেগেছে গোলাপ গ্রামে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:২৭, ফেব্রুয়ারি ১৩ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ আর মাত্র একদিন। তারপর ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশেও দিনটি উদযাপিত হবে বেশ ঘটা করেই। বিশেষ করে তরুণ-তরুণী থেকে মধ্যবয়সী জুটি এই উৎসব উদযাপনে মেতে ওঠেন। দিনটিতে অনেকে পছন্দের মানুষকে প্রথমবারের মতো ভালোবাসার কথা জানান। কেউ কেউ ভালোবাসার মানুষকে নতুন রূপে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এই ভালোবাসার ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো লাল গোলাপ। তাই দিনটিতে গোলাপের চাহিদা থাকে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। সেই বাড়তি ফুলের চাহিদা মেটাতে গোলাপ তোলার ধুম লেগেছে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের ১০টির বেশি গ্রামে। শ্যামপুর, বাসুটিয়া, বোয়ালিয়া, বাগ্ননীবাড়ি, আকরান, কালিয়াকৈর, সামাইর, ভবানীপুর, কমলাপুর, মৈস্তপাড়াসহ এই ইউনিয়নের আরও কিছু গ্রামের জমিতে চাষাবাদ হয় গোলাপের। তিন দশক ধরে টানা গোলাপ চাষাবাদ হওয়ায় অঞ্চলটি গোলাপ গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, বিরুলিয়া ইউনিয়নের গোলাপ চাষ হওয়া গ্রামগুলোয় জমিতে তো বটেই, বাড়ির আঙ্গিনায় ফাঁকা জায়গা থাকলে সেখানেও গোলাপ চাষ করা হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে অধিকাংশ গোলাপ ক্ষেতে চাষিরা গোলাপ তুলছিলেন। কাঁচি দিয়ে ডাটাসহ গোলাপ কাটা হচ্ছে। হাতে গোলাপ বোঝাই হয়ে গেলে তা ক্ষেতের কোণায় পানিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।   বিকেল গড়াতেই সেসব গোলাপ ডালা, খাঁচায় ভরে স্থানীয় গোলাপের আড়ত মৈস্তাপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউবা ভ্যানে আড়তে ফুল নিয়ে আসছেন। আড়তে কাপড়, কাগজ দিয়ে ফুল ঢেকে রাখা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ না ঢেকেই ফুল রাখছেন। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যার আগেই এদিন বাজার বসতে শুরু করেছে। ব্যাপারীদের আনাগোনাও বেড়েছে। মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে গোলাপ বেচাকেনা। এরপর এই গোলাপ চলে যাবে রাজধানীর শাহবাগ ও আগারগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গোলাপ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হয়। যেকোনো সময়ের চেয়ে এই দুই দিবসের আগের সময়টা গোলাপ বাগানের বেশি যত্ন নেয়া হয়। তাছাড়া এই সময়টি গোলাপের মৌসুমও। ফলে এ সময় প্রচুর গোলাপ থাকে বাগানে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ভালোবাসা দিবস সামনে রেখে সেই গোলাপ তোলা এখনই শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন নিজ জমিতে গোলাপ তুলছিলেন। সঙ্গী হিসেবে আরেকজন শ্রমিক নিয়েছেন। আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে গোলাপ বাগান করেছি। আমরা প্রতিদিনই ফুল তুলি। কিন্তু এখন চলছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। আজ ৩ হাজার ফুল কাটার টার্গেট আছে। এখন পর্যত প্রায় ২ হাজার ফুল কেটেছি।’   একই গ্রামের বাসিন্দা মো. রাসেল। শুক্রবার দুপুরের দিকে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মোট চারটা গোলাপ বাগান আছে। আমার এখানে ভোর থেকে গোলাপ তোলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার গোলাপ তুলতে পেরেছি। আমার এখানে মাত্র একজন শ্রমিক কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত এক ক্ষেতের অর্ধেক ফুল তুলতে পেরেছি। বাকি তিন ক্ষেতের ফুলও আজই তুলে ফেলবো। এত ফুল একজন শ্রমিক দিয়ে তোলা সম্ভব হবে না। তাই আরও শ্রমিক আনার জন্য যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গতকালও প্রতিটি গোলাপ ২ থেকে ৪ টাকায় বিক্রি করেছি। আজ একটু দাম বেশি। ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছি।’ চাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘গোলাপ তোলার পরে এখানে মার্কেট আছে, সেখানে বিক্রি করি। যারা ব্যাপারী আছেন, তারা ঢাকার শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ে বিক্রি করেন। এ গোলাপ ঢাকার বাইরেও যায়। পুরো বাংলাদেশেই যায় এই গোলাপ। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যায় এই ফুল। গ্রামের মার্কেট থেকেও ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সব জায়গায় চলে যায়।’ আবুল হোসেন ক্ষেতেই কিছু গোলাপ বিক্রি করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘আজ আমি ১০ টাকা করে বিক্রি করছি। ক্ষেত থেকে এক জায়গায় ২০০, আরেক জায়গায় ৫০০ গোলাপ বিক্রি করেছি। আজ ১০ টাকা করে বিক্রি করলেও তার আগে ৪ টাকা, ৫ টাকা করে গোলাপ বিক্রি করেছি। আজ ঢাকায়ও দাম বাড়ছে।’ গোলাপ ছাড়াও জিপসিও তুলছিলেন চাষিরা। জিপসির গোড়া কাটতে কাটতে মো. হানিফ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি আঁটি জিপসি ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকায়ও বিক্রি করি। এটা হলো বাজার বুইঝা। যার কাছে যা রাখা যায়।’ গোলাপ, জিপসি ছাড়াও বেশকিছু জাতের ফুল চাষাবাদ হয় গোলাপ গ্রামে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সেগুলো তোলায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে গ্রামটির ফুল চাষিদের।