ভোলায় বেপরোয়া চালকদের কারনে বাড়ছে দুর্ঘটনা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৪৩, ফেব্রুয়ারি ০৯ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥  ভোলা-চরফ্যাশন সড়কে যানবাহন বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। এতে যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এই রুটের চালক ও হেলপারদের অধিকাংশ মানসিকতা-মনোভাব, অদক্ষতা-অসতর্কতা, দ্রুত যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে গাড়ি চালান। অথচ পরিবহন মালিকরা জেনেও অতিরিক্ত মুনাফার আশায় এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এছাড়াও পরিবহন সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজির কারণে খরচ ও মজুরি টার্গেট পূরণ করতে দ্রুত যাওয়ার প্রতিযোগিতাও মেতেছেন চালকরা। সংশ্লিষ্ট পরিবহন সেক্টর কর্তৃপক্ষসহ পুলিশের বিনা নজরদারি ও অভিযান না থাকায় সড়কে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধ হচ্ছে না। জানা যায়, ভোলা-চরফ্যাশন রুটে ১৮২টি বাস চলাচল করছে। যাঁর মধ্যে লোকাল বাস ১৬৭টি ডাইরেক্ট বাস ১৫টি ও নাইট কোর্চ বাস ১টি। এছাড়াও দূরপাল্লায় চলাচল করছে কয়েকটি কোম্পানির যাত্রীবাহি বাস। চালকদের বেপরোয়ানায় ইদানীং পরপর কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ভোলা-চরফ্যাশন সড়কে। গতবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ বছরের এক শিশুসহ প্রাণ হারায় তিনজন। ৭ ডিসেম্বর ভোলা-ইলিশা মহাসড়কের ব্যারিষ্টার কাচারি এলাকায় বাস-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই জসিমউদদীন নামে এক স্কুল শিক্ষক নিহত হন। স্থানীয়রা আহত বিজয় রায় নামে একজনকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নেওয়া পথে তাঁরও মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে শুধু দুই বাসের পাল্লা দেয়ার ঘটনা কেন্দ্র করে। ৩রা ফেব্রুয়ারি ভোলা-ভেদুরিয়া মহাসড়কের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় বাস চাপায় নিহত হয় অটোরিকশা চালক কবির হোসেন। ৭ ডিসেম্বর ও ৩রা ফেব্রুয়ারির ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বাসে আগুন দেওয়াসহ ভাংচুরও করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। সবশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভোলা থেকে চরফ্যাশন যাওয়ার পথে বেপরোয়া গতির কারনে জুয়েল নাজমুল পরিবহন নামে যাত্রীবাহী একটি বাস বোরহানউদ্দিন এলাকায় রাস্তায় পাশে থাকা পুকুরে পড়ে গিয়ে ২৫ যাত্রী আহত হয়। যদিও জেলা বাস মালিক সমিতির কর্মকর্তাদের দাবি নাজমুল পরিবহনের এস্পিরিন ভেঙে যাওয়ায় বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। ভাড়া ও অন্যান্য ছোট ছোট বিষয় নিয়ে প্রায়ই চালক-হেলপাররা যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। বাকবিত-া হলে অনেক সময় যাত্রীদের গাড়ি থেকে ফেলে দেয়ার হুমকিও দেয়। সড়কে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসংখ্যবার বাস চালক-হেলপারদের সঙ্গে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও ভোলা-চরফ্যাশন সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত চালক-হেলপাররা অনৈতিক আচরণ করে। কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা কৌশলে এড়িয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, ওই রুটে দুর্ঘটনার অন্যতম কারন বেপরোয়াভাবে যান চলাচল, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন। আর এসব যানবাহন পুলিশের নাকের ডগায় চলছে। এছাড়া চালকের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা, অতিরিক্ত পণ্য ও যাত্রী পরিবহন, ট্রাফিকদের দায়িত্বে অবহেলা, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা-মনোভাব, অদক্ষতা-অসতর্কতা, দ্রুত যাওয়ার মানসিকতাসহ নানা কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে। জেলা বাস মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক আকতার হোসেন মঞ্জু জানান, চালকদের নিদিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নিদিষ্ট সময়ে চালকদের স্টেশনে পৌঁছাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে চালকরা নিদিষ্ট সময়ে স্টেশনে পৌঁছাতে না পারলে সেক্ষেত্রে তাঁরা বেপরোয়া গতি নিয়ে গাড়ি চালায়। যাঁর কারনে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধ বোরাক নসিমন-করিমন ও সিএনজির কারনে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে বলে দাবি তাঁর। তিনি আরও জানান, কোনো বাস দুর্ঘটনায় পড়লে তা খতিয়ে দেখে চালকের দোষ খুঁজে পাওয়া গেলে সেই চালকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভোলা ট্রাফিক জোনের টিআই এ কে রহমান বাংলাদেশের আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাস মালিক ও সাধারণ মানুষ সবার সমন্বয়ে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাজ করছে। আর বাসের চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দরকার। কারণ তাদের সচেতনতার মাত্রা খুবই কম। সার্বক্ষণিক তাদের মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। চালকদের মূল লক্ষ্য থাকে দ্রুত বাস চালিয়ে টাকা রোজগার, তাই সড়কে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠে। তবে ট্রাফিক বিভাগের এসবের কোনো ছাড় নেই।