মামলার জালে লালমোহনের আট ইউপি নির্বাচন

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:০৫, ফেব্রুয়ারি ০৩ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়ন। ২০০৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয় এ ইউনিয়নে। আর মাত্র কয়েকটি দিন পরই ১৮ বছর পূর্ণ হবে। ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে একটানা ১৮ বছর পার করে দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফসহ তার পরিষদ। এরই মধ্যে তিনজন ইউপি সদস্য মৃত্যুবরণও করেছে। তবু ওইসব শূন্য ওয়ার্ডেও নির্বাচন হয়নি। কয়েক দফা তফসিল ঘোষণা হলেও আবার তা স্থগিত হয়ে যায়। ১৭টি মামলা এই ইউনিয়নকে দেড় যুগ নির্বাচন বঞ্চিত রেখেছে। মামলা দিয়ে একইভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে উপজেলার চরভূতা ইউনিয়ন, কালমা ইউনিয়ন ও লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের নির্বাচন। এই তিন ইউনিয়নে একযোগে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ নির্বাচন হয়। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে তারাও পার করেছেন প্রায় ১০ বছর। ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে লালমোহন সদর ইউনিয়নেরও মেয়াদ। এ ইউনিয়নেও মামলা আতংক বিরাজ করছে। এছাড়া ধলীগৌরনগর, বদরপুর ও রমাগঞ্জ ইউনিয়নে ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ নির্বাচন হয়। এসব ইউনিয়নের নির্বাচনের মেয়াদও মার্চ মাসেই শেষ হচ্ছে। কিন্তু মামলার রেশ এসব ইউনিয়নেও পড়েছে। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের সঙ্গে সীমানা জটিলতার মামলা করা হয়েছে এসব ইউনিয়নে। লালমোহন উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মামলা জটিলতা পৌরসভাসহ ৯ ইউনিয়নকেই স্পর্শ করেছে। এসব জটিলতা কাটিয়ে এক বছর আগে পৌরসভা ও দুই মাস আগে ফরাজগঞ্জ ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়। বাকি ৮ ইউনিয়নের মধ্যে চলছে মামলা মামলা খেলা। পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের নির্বাচন ১৮ বছর ধরে না হওয়ায় সবচেয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন ওই ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ওই এলাকার বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম জামাল ও যুবলীগ আহবায়ক শাহিন মাতাব্বর জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ নিজের লোকজন দিয়ে ১৭টি মামলা করেছেন। এসব মামলা হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়। সর্বশেষ এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর ইউনিয়নকে ভাগ করে নতুন মোতাহারনগর নামে একটি ইউনিয়নের গেজেট হয়। এই ভাগের বিরুদ্ধেও চেয়ারম্যান ৪টি মামলা করে নির্বাচন বন্ধ করে দেন। যদিও চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ জানান, একতরফা ইউনিয়নকে ভাগ করার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মামলা করেছে। মামলা আমি করিনি। কালমা ইউনিয়ন ও চরভূতা ইউনিয়নের নির্বাচন আটকে গেছে পৌরসভার সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে মামলার কারণে। পৌরসভার ভোট গত বছর হয়ে গেছে। কিন্তু এ দুই ইউনিয়নের ভোট আর হয়নি। নতুন করে কালমা ইউনিয়ন ও বদরপুর ইউনিয়নের মধ্যে সীমানা নিয়ে আরও একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি জাকির হোসেন পঞ্চায়েত। ধলীগৌরনগর ও রমাগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যেও সীমানা নিয়ে ২টি মামলা করা হয়েছে বলে জানান রমাগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক জামাল উদ্দিন। লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের নির্বাচনও হচ্ছে না পার্শ্ববর্তী চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে মামলার কারণে। লালমোহন সদর ইউনিয়নের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের সীমানা নিয়ে মামলা হয়। ওই মামলা নিষ্পত্তি হয়ে দুই মাস আগে ফরাজগঞ্জ ইউপি নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন মামলা হয় কিনা তা নিয়ে আতংকে আছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ভোলা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন আল মামুন মোবাইলে বলেন, আমরা চাই না কোনো ইউনিয়নের নির্বাচন বন্ধ থাকুক। আমরা নির্বাচনমুখী। মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করি নির্বাচন কমিশন দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।