কীর্তনখোলা নদীর ভাঙনে নিস্তব্ধ আরজ আলী পাবলিক পাঠাগার

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:২৮, নভেম্বর ১১ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কীর্তনখোলা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে বরিশাল সদর উপজেলা চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি সেখানকার কাঁচা এবং আধাপাকা সড়কও বিলীন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে চারণ দার্শনিক আরজ আলী মঞ্জিল পাবলিক পাঠাগার। সেখানে যাওয়া-আসার লামচরি সড়ক বিলীন হওয়ায় দর্শনার্থী ও পাঠক শূন্য হয়ে পড়েছে পাঠাগারটি। যার ফলে কীর্তনখোলার ভাঙ্গন রোধের স্থায়ী সমাধানের দাবি উঠেছে। দার্শনিক আরজ মঞ্জিল পাবলিক পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক ও আরজ আলী মাতুব্বরের ছোট ছেলে কাঞ্চন আলী মাতুব্বরের ছেলে শামীম আলী মাতুব্বর বলেন, ‘কীর্তনখোলা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে লামছড়ি এলাকার পোটকারচর, নোমোপাড়া ও মীরকান্দা তিনটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। জমিজমা এবং ঘরবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন নিঃস্ব গ্রামবাসী। সম্প্রতি নদী ভাঙ্গনে আরজ আলী মঞ্জিল পাবলিক পাঠাগারে যাওয়া-আসার সড়কটিও বিলীন হয়। এখন হুমকির মুখে পড়েছে ওই পাঠাগার থেকে শুরু করে আরজ আলীর বসত বাড়িও। এ বছর শুরুতেই করোনার কারণে দীর্ঘদিন পাঠাগার বন্ধ রাখা হয়। এরপর সড়কটি বিলীন হওয়ায় এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আরজ আলী মঞ্জিল পাবলিক পাঠাগারটি। পূর্বে যেখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ দর্শনার্থী আসতো। এখন একজনও আসেন না। পূর্বে পাঠাগারটিতে বই পড়তে আসতেন বহু পাঠক। তারাও আসা বন্ধ করে দিয়েছেন বলেন শামীম আলী মাতুব্বর। তিনি আরো বলেন, ‘করোনা পরবর্তী দর্শনার্থী ও পাঠক আসতে না পারলেও অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে সড়কটি ঠিক করার অনুরোধ জানাচ্ছেন। কিন্তু ওই সড়ক সচল করা আমাদের সাধারণ জনগণের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজন সরকারের সাহায্য-সহযোগিতা। এদিকে সহযোগীতা চেয়ে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে স্থানীয়রা। কর্মসূচী থেকে কীর্তনখোলার ভাঙ্গন রোধের স্থায়ী সমাধান চাওয়া হয়েছে। ১৯৮৫ সালে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে সেখানে বিভিন্ন লেখকের ১৩০০ বই রয়েছে। এর মধ্যে চারন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের লেখা ১২টি পান্ডুলিপি একত্রিত করে তিনটি সমগ্র প্রকাশ করা হয়। সেগুলোও পাঠাগারে রাখা হয়েছে। এখানে দর্শনার্থী ও পাঠকরা এসে চারন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর সম্পর্কে ধারণা নেয়ার পাশাপাশি তার লেখা পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারতেন। সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, সারা জীবনের উপার্জন নিজের ভোগবিলাসে ব্যবহার না করে গ্রামবাসীদের জন্য আমার দাদা আরজ আলী মাতুব্বর ১৩৪৮ সালে নির্মাণ করেছিলেন একটি পাঠাগার। ওই সময় বন্যায় তার জমি বিলীন হলেও তিনি তাতে সামান্যতম দুঃখ পাননি। কিন্তু বই হারিয়ে তিনি অঝোরে কেঁদেছিলেন। যা আমরা পূর্ব পুরুষ থেকে জানতে পেরেছি। দারিদ্রতার কারণে আরজ আলী মাতুব্বর মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। এরপর বাড়িতে বসেই তিনি লেখাপড়া করতেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঘাটতি থাকলেও লেখার শুরুর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ১৫টি পান্ডুলিপি রচনা করেছেন। তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয় চারটি বই। ১৯০০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরিশালের লামছড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আরজ আলী মাতুব্বর। ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ ৮৬ বছর বয়সে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিজের শরীর তিনি দান করেন মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের জন্য। চোখ দান করেছিলেন দৃষ্টিহীনদের জন্য। বিবাহিত জীবনে আরজ আলীর ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে ছিলো। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ছোট মেয়ে মুকুল বেঁচে আছে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘লামচরি এলাকার ভাঙ্গন রোধে আড়াই কোটি টাকার জিওব্যাগ ফেলানোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে ৪০ ভাগ কাজ করার পরও ভাঙ্গন রোধ করা যায়নি। এজন্য ওই প্রকল্প আর এগোয়নি। তবে লামচরি এলাকা সংলগ্ন চরবাড়িয়ার ভাঙ্গন প্রতিরোধে ২৭০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। তবে তাতে লামচরির কোন উপকার হবে না। লামচরির জন্য পৃথক প্রকল্প প্রয়োজন।