‘মাইন্ড এইড হাসপাতালের রোগী ঘুমাতে না চাইলে সুই দিত’

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৭:১৬, নভেম্বর ১১ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বহুল সমালোচিত মাইন্ড এইড হাসপাতালের কোন রোগী ঘুমাতে না চাইলে সুই (ইনজেকশন) দেওয়া হতো বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের বাবুর্চি রুমা আক্তার। তিনি বলেন, রাতের বেলায় জেগে থাকা একজন রোগীর জন্য বাকি অন্যদের অসুবিধা হতে পারে বা ঘুম ভেঙে যেতে পারে বলেই জেগে থাকা রোগীকে সুই (ইনজেকশন) দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হতো। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর আদাবর এলাকায় মাইন্ড এইড হাসপাতালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন রুমা। বাবুর্চি রুমা আক্তার হাসপাতালটিতে প্রায় দুই মাস কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, রোগীরা বেশি চিল্লাচিল্লি করলে ওই রুমে (সাউন্ড প্রুফ রুমে) আটকে রাখা হতো। কোন রোগী যদি কান্নাকাটি বা চিল্লাপাল্লা করেন ওই রুম থেকে শব্দ বাইরে আসত না। কোন কিছু বোঝা যেত না। আমি ভয়ে রোগীদের দেখতে যেতাম না। একবার এক রোগী আমার হাতে কামড় দিয়েছিল। এরপর থেকে আমি আর রোগী দেখতে যেতাম না। বাবুর্চি আরো বলেন, হাসপাতালে নারী-পুরুষ সব রোগী আসত। কিছুদিন আগে এখানে নিচতলায় নয় জন মহিলা রোগী ছিল। চলে যেতে যেতে সর্বশেষ চারজন ছিল। পুলিশ স্যারের মৃত্যুর পরে তারাও চলে গেছেন। তিন তলা, দুই তলা মিলিয়ে এখানে পুরুষ রোগীও ছিল।রুমা বলেন, হাসপাতালের ভিতর কি হয় - আমরা জানি না। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে যা দেখছি তা নিয়ে মিছা কথা বলব না। শুনছি, ওইদিন (সোমবার) একটা রোগী আসবে। ম্যানেজার স্যার রোগীকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসেন। ওই (সাউন্ড প্রুফ) রুমে যখন নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় তখন রোগী রুমে ঢুকতে চায় না। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে এমনটাই দেখছি। রোগীকে টেনে হেঁচড়ে ছয়-সাত জন মিলে ওই রুমে নিয়ে যায়।  তিনি বলেন, দুই-তিন জন মানুষ পুলিশ স্যারের বুকের ওপর বসে তার হাত-পা বানছে। বাধার পরে স্যার নিস্তেজ হয়ে গেলেন। এরপরে আমি গিয়ে আমার সাথে রান্না করে ওই মেয়েটিকে বলি। মেয়েটাও এসে সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখল। পরে আমরা হাসপাতালের রান্নাঘরে চলে আসি। হাসপাতালের স্টাফদের জন্য রান্না করতে থাকি। এর কিছুক্ষণ পরে শুনি স্যারে মারা গেছেন। সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সিনিয়র এএসপি আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই কর্মচারীদের ধাস্তাধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবার। ভিডিওটিতে দেখা যায়, হাসপাতালে ঢোকার পরই আনিসুল করিমকে ৬ থেকে ৭ জন টেনে-হেঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন তারা। হাসাপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাথার দিকে থাকা দুইজন হাতের কনুই দিয়ে আনিসুল করিমকে আঘাত করছিলেন। এ সময় একটি কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুল করিমের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর তাকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এ ঘটনায় সোমবার রাতে প্রথমে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরে আরও একজনকে আটক করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এক সন্তানের জনক আনিসুলের বাড়ি গাজীপুরে। সর্বশেষ আনিসুল করিম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।