প্রস্তুতি শেষ, এখনও চালের মুখ দেখেননি জেলেরা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:২০, নভেম্বর ০৩ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পটুয়াখালী উপকূলের জেলেরা। মাছ ধরতে ট্রলার মেরামত, নতুন জাল তৈরি ও পুরোনো জাল সেলাইসহ সকল প্রস্তুতিই শেষ করেছেন তারা। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে চললেও এখনও সহায়তার চাল পাননি জেলেরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মৎস্যজীবীরা। প্রতি বছর আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার শেষের দিকে গভীর সমুদ্র থেকে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের নদীর মোহনায় এসে ডিম ছাড়ে মা ইলিশ। তাই ২০০৬ সাল থেকে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন অবরোধ দিয়ে আসছে সরকার। এ সময় সকল ধরনের মাছ শিকার, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য অধিদফতর। এবার প্রশাসনের তৎপরতা বেশি থাকায় উপকূল জুড়ে মাছ ধরা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বন্ধের এ সময়টাতে জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ কেজি চালসহ দেয়া হয় অন্যান্য আর্থিক সহায়তা। কিন্তু পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সরকারের বরাদ্দকৃত ভালনারেবল গ্র“প ফিডিংয়ের (ভিজিএফ) চাল এখনও পাননি অধিকাংশ জেলে। এ বছর উপজেলার নিবন্ধনকৃত ১৮ হাজার ৩শ জেলে খাদ্য সহায়তার তালিকায় রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মা ইলিশের বাধাহীন প্রজনন এবং সকল প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য অধিদফতর। আগামী ৪ নভেম্বর রাত ১২টার পরপরই মৎস্যজীবীরা নেমে পড়বেন রূপালী ইলিশের সন্ধানে। দেশের অন্যতম মৎস্য বন্দর আলীপুরের জেলে সিদ্দিক, বেল্লাল ও রুহুল আমিন মাঝি বলেন, সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আমরা পালন করেছি। আমরা ইতোমধ্যে ইলিশ ধরার সকল প্রস্তুতিও শেষ করেছি। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ৫ নভেম্বর সমুদ্রে যাব। তবে মহিপুরের কয়েকজন জেলে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, সরকার যে চাল দেয় তা সঠিকভাবে বণ্টন হয় না। যা আসে তা ঠিক মতো দেয় না। আবার কম দিলেও সঠিক সময় দেয় না। এ বিষয়ে লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, উপজেলা গুদামে চাল ছিল। চাল আসার পরপরই আবহাওয়া বৈরী হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদে এতগুলো চাল রাখার জায়গা নেই, বিধায় চাল এখনও উপজেলা গুদামে। আবহাওয়া ভালো হলে চাল এনে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, এবারের জেলে তালিকার চাল আনতে ৬৫ হাজার টাকা পরিবহন খরচ লাগবে, এত টাকা কোথায় পাব? এর আগে বিভিন্ন ত্রাণের চাল আনতে আমি ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণগ্রস্ত হয়েছি। এদিকে কুয়াকাটা আশার আলো পুনর্বাসন মৎস্যজীবী জেলে সমবায় সমিতি লি. এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ জামাল মোল্লা বলেন, অবরোধকালীন যদি প্রতিবেশী দেশের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরতে না পারত তাহলে জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত। অবরোধের সময় বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যান পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা এমনটাই দাবি করেছেন মৎস্যজীবীরা। কলাপাড়া উপজেলা ফিসিং ট্রলার মাঝি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর মাঝি বলেন, দেশের জেলেরা অবরোধ পালন করলেও মাছ ধরছে ভারতের জেলেরা। তাই ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা সফল করতে দেশের জলসীমানা শতভাগ সুরক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিবে সরকার এমনটাই আশা করছি। মহিপুর মৎস্য আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ ফজলু গাজী বলেন, যেহেতু অবরোধের আগে মাছ ধরা পড়েনি, তাই আমরা আশা করছি অবরোধ শেষে বড় সাইজের পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিলবে। এ বিষয়ে কথা হয় কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জহিরুন্নবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, কলাপাড়া উপকূলের জেলেরা নিজেরাই অনেকটা সচেতন হয়েছেন। আমরা এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৭ জেলেকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। ৫৮ হাজার মিটার জাল জব্দ করেছি। তিনি আরও বলেন, আমরা দিনরাত মা ইলিশ রক্ষায় কাজ করছি। আশা করছি আমরা এ বছর শতভাগ সফল হয়েছি। কারণ গত পূর্ণিমা ও আমাবস্যার জো’তে প্রচুর বৃষ্টিসহ বজ্রপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে সকল ডিমওয়ালা মা মাছ দ্রুত ডিম ছেড়ে দেয়।