পটুয়াখালীতে পাউবোর জমি দখলে নিয়ে ঘর তুলে ভাড়া দেয়া হচ্ছে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:১১, নভেম্বর ০২ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর বন্দরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাউবোর খালি জায়গা দখলে নিয়ে টিনশেড ঘর তুলে অনেকে বসতবাড়ি হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। আবার অনেকে পরিত্যক্ত পাকা ভবন দখলে নিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। এভাবে সম্পত্তি বেহাত হতে চললেও দখল মুক্ত করতে পাউবোর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পাউবোর পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, ষাটের দশকে কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর বন্দরে পাউবোর নিজস্ব কার্যালয় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের জন্য প্রায় ৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সেখানে নির্মাণ করা হয় কার্যালয় ও আবাসিক ভবন। কমপক্ষে ৪০ বছর আগে সেখানকার কার্যালয় গুটিয়ে ফেলা হয়। এরপর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে জমি ও নির্মিত আটটি পাকা ভবন। ইতিমধ্যে সেখানে প্রায় অর্ধেক সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। সরেজমিনে এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৮ সালে পাউবোর এসব জমি, সম্পত্তি ও ভবনগুলো বেদখল হতে থাকে। দখলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির পাশাপাশি এলাকার ভূমিহীন ও দরিদ্র মানুষও আছেন। পাউবোর সম্পত্তির চারদিকে শুধু নতুন নতুন টিনশেড ঘর। পাকা পরিত্যক্ত ভবনও টিনের বেড়া দিয়ে দখলে নেওয়া হয়েছে। ওই সম্পত্তির পশ্চিম অংশের একটি টিনের ঘরের বাসিন্দা ডলি রানী বলেন, তাঁর স্বামী স্বপন চন্দ্র বাজারে সেলুনে কাজ করেন। তাঁরা মাসিক দেড় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে সেখানে থাকেন। বারেক তালুকদার নামের এক ব্যক্তি ওই সম্পত্তি নিজের দাবি করে ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন বলে জানান স্থানীয় ব্যক্তিরা। এ ব্যাপারে বারেক তালুকদার কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরিত্যক্ত ভবনে বাস করছেন মোছা. হোসনে আরা। তিনি সেখানে প্রায় পাঁচ একর জমি নিজেদের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের জমি অধিগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন জমি পড়ে আছে। আমরা ক্ষতিপূরণের টাকা জমা দিয়েছি। এখন এই জমি আমাদের।’ তিনি ওই সম্পত্তিতে পারিবারিক কবরও বানিয়েছেন। পাউবোর পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন দিনমজুর কালাম মৃধা ও তাঁর স্ত্রী লিপি বেগম। কালাম মৃধা বলেন, ‘আমরা ভূমিহীন। কী করুম, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে আছি। সরকারের জায়গা, সরকার কইলে ছাইড়া দিমু। আরেক ভবনে বাস করছেন নুর জাহান বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব, সরকারের ঘরে আছি। আমরা দখল করি নাই। যাইতে কইলে চইলা যামু। তয় বড়লোকেরা সরকারের জমি দখল কইরা এইহানে রইছে। হেগো আগে উচ্ছেদ করতে হইবে। পাশের বিপিনপুর গ্রামের বাসিন্দা মমিন সিকদার বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দেখছেন এই জায়গা ও সম্পত্তি সরকারের। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। একই গ্রামের মোঃ মোস্তফা বলেন, দখল তো হচ্ছেই, পরিত্যক্ত ভবন ধ্বসেও ঘটতে পারে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা। পাউবো এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। পাউবো কলাপাড়া কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, মহিপুর বন্দরে পাউবোর কার্যালয় সরিয়ে নেয়ার পর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে বিশাল এলাকার জমি ও নির্মিত ভবনগুলো। তবে সম্পত্তি রক্ষায় চারদিকে পিলার বসিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দখলদারেরা সেই কাঁটাতারের বেড়া ফেলে দিয়ে নিজেরা যে যাঁর মতো করে দখলে নিচ্ছেন। দখলদারদের মধ্যে ৩১ জনের একটি তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাউবোর পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ওই সম্পত্তি পাউবোর। শুনেছি, কিছু ব্যক্তি ওই সম্পত্তির কিছু অংশ নিজেদের নামে বিএস জরিপ করেছে। তবে এখনো গেজেট বের হয়নি। তাই বিএস জরিপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। পাউবো তাদের সম্পত্তির দখলদারদের তালিকা তৈরি করেছে, শিগগিরই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।