রাতের আকাশে উড়ছে রং-বেরংয়ের ফানুস

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৪৯, নভেম্বর ০২ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ হঠাৎ করে রাতের আকাশে অদূরে তাকালেই মনে হবে অসংখ্য তারার মেলা। আবার মাঝে মধ্যে দুই একটি তারা মাটিতে খসে পড়ছে। আসলে এর কোনোটাই নয়। এগুলো আকাশছোঁয়া রং-বেরংয়ের ফানুস। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমায় এসব ফানুস উড়ানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ উৎসব ঘিরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ২৮টি রাখাইন পল্লীতে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ। আলোকসজ্জ্বা করা হয়েছে প্রতিটি বিহারে। এদিকে ফানুস উৎসব দেখার জন্য রাখাইন পল্লীর আশপাশে উৎসুক লোকজন ভিড় করছে। তবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য রাখাইন পল্লীগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সূত্রে জানা গেছে, আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শুরু হয়ে কার্তিকের এ পূর্ণিমাতে শেষ হয়। এ সময় বৌদ্ধবিহারগুলোতে তিন দিনব্যাপী গৌতম বুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এ প্রবারণা পূর্ণিমা। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু করেন। প্রতিবছরই এই সময় আকাশে ফানুস উড়িয়ে এবং ধর্মীয় নানা আয়োজনের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করা হয়। এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আর রাতে আকাশে ওড়ানো হয় নানা রঙের ফানুস। এই দিনে রাখাইনরা আপ্যায়ন, অভিলাস পূরণ, ধ্যানশিক্ষা ও কর্মসম্পাদনের লক্ষ্যে প্রতিদিন সকালে পরিষ্কার পোশাকে বিভিন্ন বিহারে গমন করে। আয়োজক কমিটির অন্যতম তেননান রাখাইন বলেন, এ উৎসব ঘিরে রাখাইন পল্লীর প্রতিটি ঘরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। চলছে ধর্মীয় নাচ-গান, বয়ান ও আতশবাঁজি। এছাড়া বিহারগুলোতে আলোকসজ্জ্বা করা হয়েছে। নর-নারী, শিশু, যুবক-যুবতীরা নতুন পোশাক ও উন্নতমানের খাবার নিয়ে বিহারে গমন করছেন। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনকে আতিথেয়তায় পরিবেশন করা হয় বিন্নি চালের হরেক রকম পিঠা পুলি। দীর্ঘ একমাস ধরে রং-বেরংয়ের কাগজ এবং বাঁশের কঞ্চি দিয়ে দেড়শ’ ফানুস বানানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বেতকাটা পাড়া ধর্মবিজয় বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি মংচো তালুকদার বলেন, এ বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবারণা এ উৎসব পালন করা হয়। বিশ্ব থেকে এ ভাইরাস দূরীভূত হওয়ার জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয় বলেও তিনি জানান। রাখাইন নেত্রী মেইনথিন প্রমীলা জানান, ফানুস উড়ানো এখন সার্বজনীন উৎসব। নানা পোশাজীবী, সকল ধর্মের লোকজন এ উৎসবে মিলিত হয়ে আনন্দ পায়। পটুয়াখালী জেলা রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ারের সভাপতি বাবু এমং তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, কুয়াকাটাসহ কলাপাড়া উপজেলার ২৮টি পল্লীর রাখাইনরা তিনদিন ধরে এ উৎসব একযোগে পালন করেছে। মহিপুর থানার ওসি মো.মনিরুজ্জান বলেন, রাখাইন পল্লীগুলোতে পুলিশ ও আনসার ভিডিপি সদস্যদের মোতায়ন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসানাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাখাইন পল্লীগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।