শেবাচিমে অরাজকতায় কলকাঠি নাড়ছেন যারা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১০:২৯, নভেম্বর ০১ ২০২০ মিনিট

বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে কথায় কথায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট এখন অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের হাতে রোগী, স্বজনদের পর এবার হামলার শিকার হলেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। মারধরের ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলা থেকে রক্ষা পেতে নতুন করে শনিবার অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘটের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন। জানা গেছে, এর নেপথ্যে রয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশন বাণিজ্য। বাণিজ্য চলমান রাখতে ইন্টার্নদের কলকাঠি নাড়ছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এদিকে ধর্মঘটের নামে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা অচল রাখায় ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মাসুদ খানকে বেদম মারধর করার পর এবার তার বিচারের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেেছন ইন্টার্ন চিকিৎকরা। গতকাল শনিবার থেকে তারা ধর্মঘট শুরু করেন। হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৪ এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মাসুদ খান অভিযোগ করেছেন, ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সজল পান্ডের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন গত ২০ অক্টোবর তার অফিস কক্ষে ঢুকে তাকে বেদম মারধর করে। ড. মাসুদ খান বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়ের করার পর গভীর রাতে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে হাসপাতালের সবগুলো গেট বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তাদের চাপের মুখে শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন। শনিবার দফায় দফায় বৈঠক করার পরও ইন্টার্ন চিকিৎকদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। শেবাচিম হাসপাতালের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বহু রোগী, স্বজন ও কর্মচারী ইন্টার্নদের মারধরের শিকার হয়েছেন। এবার হামলার শিকার হলেন একজন সিনিয়র চিকিৎসক। হাসপাতালে রোগীদের রোগ নির্ণয়ে যন্ত্রগুলো বছরে পর বছর বিকল করে রেখে ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোর সঙ্গে ৪০ ভাগ হারে কমিশন বাণিজ্য করছেন চিকিৎসকরা। কমিশনের লাখ লাখ টাকার ভাগবণ্টন নিয়ে বিরোধের জেরে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরের শিকার হন ডা. মাসুদ খান। এরপর থেকে একটি প্রভাশালী মহলের ইন্ধনে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দফায় দফায় অরাজকতা চালাচ্ছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সজল পান্ডে সাংবাদিকদের বলেন, ডা. মাসুদ খানের কমিশন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তিনি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার দুপুরে তারা অবিরাম ধর্মঘট শুরু করেছেন। হাসপাতালের গেট বন্ধ করে দিয়ে রোগী-স্বজনদের জিম্মি করার কারণ জানতে চাইলে ডা. সজল পান্ডে বলেন, এটা সাময়িক ঘটনা মাত্র। এ হামলার নেপথ্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা: সজল পান্ডে মেডিসিন ইউনিট-৪ এ দায়িত্ব পালন করছেন। সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই প্রতিদিন গড়ে ২০ জন রোগীকে সিটিস্ক্যান করার জন্য লিখেন। প্রতিটি সিটিস্ক্যান থেকে ১ হাজার টাকা কমিশন পান সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। এ নিয়ে ডা. মাসুদ খানের সঙ্গে ইন্টার্ন সজল পান্ডের বিরোধ চলছিল। গত জুুনে একই ইউনিটের দুই চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে ইন্টার্ন চিকিৎসক হোস্টেলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ রয়েছে সজল পান্ডের বিরুদ্ধে। এর আগে শুধু সিনিয়র চিকিৎসকরা ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা লিখলেও গত একবছর ধরে কমিশনের লোভে ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো শুরু করেছেন, যা মেনে নিতে পারেননি সিনিয়র চিকিৎসকরা। বরিশাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশু, নাক-কান-গলা এবং অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা কমিশন পান। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় বেকায়দায় পড়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তাদের রক্ষায় পেছন থেকে শেল্টার দিচ্ছে নগরীর একটি প্রভাবশালী চক্র। ওই চক্রের সঙ্গে রয়েছেন হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকও। কমিশন বাণিজ্য চলমান রাখতে ওই মহলটি ইন্টার্নদের দিয়ে অনেকটা চাপের মুখে হাসপাতালের পরিচালককে মামলার তদবির করাতে থানায় যেতে বাধ্য করে। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, রোগীর সেবা বন্ধ করে, হাসপাতাল অচল করে এভাবে আন্দোলন কার স্বার্থে। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কার ইশারায় হাসপাতালে এমন অরাজকতা করছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। এসব ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ধর্মঘটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তবে সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। হামলাকারীদের পক্ষে তদবির করতে শুক্রবার কোতোয়ালি থানায় গিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, আমি গিয়েছিলাম মামলা হয়েছে কি না সেটার খোঁজ নিতে। পরিচালক বলেন, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক কম তাই ইন্টার্ন চিকিৎকদের ওপরই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নির্ভর করে। সূত্র: আলোকিত বাংলাদেশ