কৌশল বদলে নিষেধাজ্ঞায়ও চলছে ইলিশ শিকার

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৫:৪৩, অক্টোবর ২৫ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক।। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রজনন মৌসুমের সঙ্গে সমন্বয় করে এবার ১৪ অক্টোবর থেকে ০৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বেচাকেনা, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য বিভাগ। নিষেধাজ্ঞা শুরুর সময় থেকে বরিশাল বিভাগের সর্বত্র চলছে মৎস্য বিভাগের নেতৃত্বে অভিযান।যে অভিযানে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী সহায়তা করছে। তবে অভিযানের পরিসংখ্যান বলছে, নদীতে ফেলা হচ্ছে জাল, ধরা হচ্ছে মাছও। যার প্রমাণ দিচ্ছে অভিযানে আটক হওয়া জেলে এবং জব্দ হওয়া জাল ও মাছের পরিমাণ। যদিও মৎস্য বিভাগ বলছে টানা অভিযানের কারণে নদীতে মাছ শিকারির সংখ্যাটা অনেকটাই কম। আর যারা করছেন তারা সবাই সুযোগসন্ধানী মৌসুমি জেলে হিসেবে পরিচিত। তারা কেউ কার্ডধারী সাধারণ জেলে নয়। বরিশাল সদরসহ মুলাদী, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সময় ও সুযোগ বুঝে চলেন বর্তমান সময়ে নদীতে মাছ শিকারিরা। তাদের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালীরা থাকায় কেউ প্রতিবাদও করতে সাহস পায় না। আবার কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী ছাড়া অন্য আভিযানিক দলের ভাড়া করা নৌযানের অনেক চালক ও সোর্সও মোবাইলে আগাম সতর্ক বার্তা পাঠাচ্ছেন ওইসব মৌসুমি জেলেদের কাছে।  সেক্ষেত্রে সব ধরনের সতর্কতা নিয়েই নদীতে মাছ শিকার করছেন মৌসুমি জেলেরা। তারপরও যারা ধরা পড়ছেন তাদের ছাড়িয়ে আনার কাজে লেগে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। এসব প্রভাবশালীর মধ্যে ক্ষমতাসীনদলের লোকজনও রয়েছেন। তবে জালের আকারের পরিবর্তন ঘটায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জাল ফেলে নিরাপদে তীরে চলে আসতে সক্ষম হন মৌসুমি জেলেরা। সম্প্রতি বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির উপস্থিতিতে বরিশালের বিভিন্ন নদীতে অভিযান চালানো হয়। এসময় নদীতে কোনো জেলে নৌকা মাছ শিকারে না দেখে তারা সন্তোষও প্রকাশ করেন। যদিও সেই অভিযানের মধ্যেই নদী থেকে কিছু জাল উদ্ধার করা হয়। যার মধ্যে অবৈধ কারেন্ট জালের সংখ্যাটাই বেশি। আবার এসব জালে পাওয়া যায় ইলিশ মাছও। জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস জানান, এবারের অভিযানে নদীতে পাওয়া জালগুলো লম্বায় খুবই ছোট ছোট। জাল ছোট করার কারণ হিসেবে তিনি জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিযানের সংখ্যা। তাই বড় জাল নদীতে ফেলতে গিয়ে অসাধুরা ধরা পড়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে এজন্য তারা জালের আকার ছোট করেছে। ফলে কোনোভাবে নদীতে জাল ফেলেই নৌকা নিয়ে তীরে উঠে যাচ্ছে ওইসব মৌসুমি জেলেরা।  তিনি আরো বলেন, নদীতে ইলিশ এসেছে, তাই যে কোনো জায়গাতেই জাল ফেললে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। আর নিষেধাজ্ঞার সময় শতভাগ ইলিশ আহরণ বন্ধে অভিযানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। যদিও অভিযানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার সময় আগের চেয়ে ইলিশ আহরণের পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে।বিভিন্ন সময়ে অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ আভিযানিক দলের নৌযানের আকার-আকৃতি একইরকম থাকায় দূর থেকেই বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে অসাধুদের কাছে। নদী তীরে রয়েছে ওইসব সিন্ডিকেটের পাহারাদার, যারা আভিযানিক দলকে অগ্রসর হতে দেখে সামনে সতর্ক করে দিচ্ছে। আবার যদি আভিযানিক দল আকস্মিক পৌঁছে যায়, তাহলে কৌশলগত অবস্থানের কারণে পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে অসাধু জেলেরা। সেক্ষেত্রে কেউ ধরা পড়লেও তাদের ছাড়িয়ে রাখতে, নয়তো অভিযান প্রতিহত করতে চালানো হচ্ছে হামলা।  মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর থেকে বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় মোট ধারাবাহিকভাবে ৭৭০টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। পাশাপাশি ৩৫০টি মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং মোট অভিযানের অনুকূলে ৩৬৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।  এছাড়া অভিযানে আটকদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩৩৬ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ২৮ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ৩ দশমিক ৫ মেট্রিকটন ইলিশ উদ্ধার করা হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান আকন বলেন, এখন পর্যন্ত অভিযানের ফলাফলে যেটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে বিগত সময়ের চেয়ে নদী ও সাগর নিষেধাজ্ঞার সময় প্রশাসনের সর্বস্তরের নজরদারি বেড়েছে। এতে বিগত সময়ের চেয়ে অভিযান, মৎস্য শিকারিদের আটক, জাল উদ্ধার বেড়েছে।  বরিশাল জেলায় ৪৭ হাজার জেলে এবং বিভাগে ২ লাখ ৮২ হাজার ৫শ জেলেকে নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়ার কথা।