বরিশালে নেই কিশোর গ্যাং, তাবুও নজরদারিতে পুলিশ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৫:১৮, অক্টোবর ২৫ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক।। কিশোর গ্যাং বা গ্রুপ সম্প্রতি দেশজুড়ে আলোচনায় থাকা একটি বিষয়। যার মাধ্যমে কিশোরদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্যও বেড়িয়ে আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল মেট্রোপলিটনসহ জেলায় কিশোর গ্যাং বা গ্রুপের কোনো অস্তিত্ব বর্তমানে নেই। তবে এখানে কিছু কিশোর এককভাবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের দ্রুত নিয়ম অনুযায়ী আইনের আওতায় আনা হচ্ছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, কিশোর অপরাধীরা যেকোনো সময় সংঘবদ্ধ হয়ে গ্রুপে রূপ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে আজ কিশোর, কাল অপরাধী আর পরশু গ্রুপের সদস্য এমনটা হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।তবে মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তাদের মতে, গোটা নগরজুড়ে তাদের বিভিন্ন ইউনিটের জোরালো নজরদারি রয়েছে। ফলে কিশোর অপরাধীদের সংঘবদ্ধ হওয়া বা তাদের অপরাধ সংঘটিত করার ক্ষেত্রে আইন ও বিচারের আওতায় আসতে হবে।স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, এক সময় বরিশাল নগরে আব্বা গ্রুপ আর বানারীপাড়া উপজেলাতে হাতুড়ে গ্রুপের নাম শোনা গেলেও বর্তমানে পুলিশের কঠোর অবস্থানে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। সম্প্রতি বরিশাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় যুব বয়সী ছেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে আড্ডা দেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগেই বখাটেপানায় লিপ্ত হচ্ছে। কেউ কেউ মাদক সেবনের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে।সূত্র বলছে, মাদক সেবন ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারিসহ কিশোরদের কিছু অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা বরিশালেও ঘটছে। তবে এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখছে পুলিশ।গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, পাড়া-মহল্লায় কিশোর ও যুবকরা একসঙ্গে অনেকেই আড্ডা দিয়ে থাকে। এমনকি নগরের বিভিন্ন পার্কেও আড্ডা দিচ্ছে সমবয়সী এ রকম বহু গ্রুপ। সমবয়সী বিধায় আধিপত্য বা যেকোনো বিষয় নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে আলাদা দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মারামারির ঘটনা ঘটতে পারে এদের মধ্যে। যেমনটা কয়েক মাস আগে নগরের বটতলাতে হয়েছে। তবে গোয়েন্দা নজরদারি বলছে, কিশোর গ্যাং বলতে যা বোঝায় সে ধরনের কোনো বিষয় এসব কিশোর-যুবকদের মধ্যে এখনও পরিলক্ষিত হয়নি। অপরদিকে বরিশাল জেলার ১০ থানা এলাকাতেও কিশোর গ্যাং বা গ্রুপের কোনো তথ্য নেই পুলিশের হাতে। তাদের মতে নগরে যেটা সম্ভব, মফস্বল বা গ্রাম অঞ্চলে সামাজিক কারণে সেটা অনেকটাই কঠিন। সেক্ষেত্রে কিশোর গ্যাং বা গ্রুপের সৃষ্টি হওয়াটাও গ্রাম অঞ্চলে অনেকটাই দুষ্কর। তবে উশৃঙ্খলভাবে মোটরসাইকেল নিয়ে উঠতি বয়সের ছেলেদের গ্রুপ বেধে ঘোরাফেরা, এক এলাকা বা জায়গাতে একটি সমবয়সী গ্রুপের কিশোরদের আড্ডা দেওয়া, মাদক সেবন করে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাসহ নানা দিকে খেয়াল রাখছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রয়োজন অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিকভাবে ব্যবস্থাও নিচ্ছেন তারা। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাজাহান হোসেন বলেন, কিশোর অপরাধ রুখতে মাঠপর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে তাদের।তার মতে, কিশোর অপরাধ রুখতে বা সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ফ্যামিলি কাউন্সেলিং সব থেকে বড় বিষয়। এক্ষেত্রে অভিভাবকরা মূল ভূমিকা নেবে। সঙ্গে শিক্ষকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। অভিভাবকদের খোঁজ নিতে হবে তাদের সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে।তেমনি শিক্ষকদেরও উচিত হবে এসব বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার ওপর আরও জোর দেওয়া। যাতে কিশোররা কোনটা খারাপ কোনটা ভালো নিজ থেকে বুঝে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, করোনাকালে কিছু উঠতি বয়সী যুবক- কিশোর ঢাকা থেকে মফস্বলে চলে এসেছে।তবে ঢাকার কালচারে ওইসব যুবকের কেউ কেউ কিশোর অপরাধের সঙ্গে জড়িত, আবার কেউ এখানে এসে নেতৃত্ব দেওয়ারও চেষ্টা করছে। সম্প্রতি হিজলায় ঢাকা থেকে আসা কিশোর দ্বারা অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর সে বিষয়টিতেও খেয়াল রাখা হচ্ছে বলে দাবি পুলিশের। বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. নাইমুল হক বলেন, বরিশাল জেলায় বর্তমানে কোনো কিশোর গ্যাং বা গ্রুপের অস্তিত্ব নেই। ভবিষ্যতেও যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেজন্য কিশোর অপরাধ রুখতে আমাদের নজরদারি রয়েছে। কেউ এককভাবে অপরাধ সংঘঠিত করলে তাকে আইনের আওতায় অবশ্যই আনা হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।