অপরাধ দমনে বিট পুলিশিং হবে গৃহ ডাক্তার

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০০:৫৭, অক্টোবর ২২ ২০২০ মিনিট

মির্জা রিমন ॥ অপরাধ দমনে বিট পুলিশিং হবে গৃহ ডাক্তার। বিট পুলিশিং হলো কমিউনিটি পুলিশিংয়ের পরিপূরক। বিট অর্থ হলো ক্ষুদ্র অর্থাৎ পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো ক্ষুদ্র আকারে নাগরিকদের দোড়গোঁড়ায় পৌঁছে দেয়া। ইতিমধ্যে বিএমপি এলাকায় ১৯৭টি বিট পুলিশং দপ্তর করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে এমনটিই জানালেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান। এ সময় তিনি বলেন, পুলিশ ও মানুষের সম্পর্ক সুদৃঢ় করতেই বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। অপরাধ প্রবণতা ও মাদক রোধে এই বিট পুলিশং অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সমাজের প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়ে বিট পুলিশিংয়ের কাজ তরান্বিত করতে হবে। সন্ত্রাসী যে কেউ হোক না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধীরা কেউ ছাড় পাবে না। এদিকে বিট পুলিশের এর আয়োজনে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। একজন এসআই, দুজন এএসআই ও পাঁচ জন কনস্টেবল প্রতিটি বিটে দ্বায়িত্বরত থেকে জনদুয়ারে পুলিশিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তাদের জন্য সরবরাহ করা হয় ক্রাইম নোট বুক। ক্রাইম নোট বুকের মাধ্যমে নিয়মিত প্রতিবেদন নেবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি নিরাপদ সমাজ গড়ি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পুলিশিং সেবা নাগরিকরা যাতে নিজ নিজ গৃহে থেকেই ভোগ করতে পারে সে লক্ষ্যেই কাজ করছে পুলিশ। বিট পুলিশের দ্বায়িত্বে থাকা নগরীর কোতয়ালি থানার এসআই ফিরোজ আলম মামুন বলেন, আমি ১৪নং ওয়ার্ডের বিট পুলিশের দ্বায়িত্বে রয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হলো পুলিশিং সেবাটা আরো ক্ষুদ্র আকারে প্রতি জন নাগরিকের ঘরে পৌঁছে দেয়া। পারিবারিক নির্যাতন, সামাজিক অবক্ষয় কিংবা আইনশৃঙ্খলার সাথে জড়িত সকল বিষয় পারিবারিক ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের কিংবা সমাজপতিদের নিয়ে ভুক্তভুগীদের দুয়ারে পুলিশ সহায়তা প্রদান করবে। এক কথায় যে কোন প্রয়োজনে পুলিশকে চাওয়া মাত্রই নাগালে পাবে জনগন। আর এলক্ষ্যে নির্দিষ্ট এলাকায় বিট পুলিশং কর্মকর্তার হটলাইন নাম্বার দেয়া থাকবে যাতে যে কোন জনগন সহসাই ফোন করে পুলিশিং সেবা পেতে পারে। সোজাসাপটা কথা হলো বিট পুলিশ তার নিজ নিজ এলাকায় সবসময়ই অতন্ত্র প্রহরীর মতো কাজ করবে। পুলিশিং সেবার জন্য নাগরিকরা থানায় আসার আগেই সুবিধাপ্রাপ্ত হবে। বিএমপি এলাকায় প্রতিদিনই পুলিশের কর্মকর্তারা বিট পুলিশিং কার্যক্রম নিয়ে নানামুখী সভা পরিচালনা করছেন। একইসাথে গণমাধ্যমগুলোতে বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রমও তুলে ধরা হচ্ছে। বরিশাল কোতয়ালি পুলিশের ওসি (তদন্ত) এআর মুকুল বলেন, কোতয়ালিতে ইতিমধ্যে ৭৫টি বিটে ভাগ করে বিট পুলিশং কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছে। এখন জনসাধারণ তার বাসায় থেকেই পুলিশিং সেবাটা দ্রুত পেয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তার থানার দারস্থ না হলেও চলবে। কারণ নিজ নিজ এলাকার গন্ডির মধ্যেই বিট পুলিশিংয়ের দপ্তর রয়েছে। এদিকে, বীট পুলিশিং কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধানসূত্রে জানা গেছে, এটি একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক বা বিশেষ পুলিশ সদস্যদের স্থায়ীভাবে দায়িত্ব নিয়োজিত করা। এলাকাগুলোকে কয়েকটি বিটে ভাগ করে বিট পুলিশিং দপ্তর তৈরী করা হয়েছে। আর বিট পুলিশিং ধারণাটি এসেছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যপদ্ধতি থেকে। জাপানের কোবান পদ্ধতিতেও প্রতটি কোবান বা পুলিশ বক্সের অধীন একটি নির্দিষ্ট এলাকা রয়েছে। অত্র এলাকাগুলোতে কিছু সংখ্যক পুলিশ অফিসার ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে নিজস্ব বিবেচনা শক্তি প্রয়োগ করে সেই এলাকায় পুলিশিং সেবা প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে তার নির্ধারিত এলাকার অপরাধ ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর নিকট গৃহ-ডাক্তারের মতোই কাজ করে। এতে করে সেসব দেশে অপরাধের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। আর অপরাধ সংগঠিত হবার আগেই তা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা করা হয়। ঠিক একইভাবে বর্তমানে দেশে অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো ক্ষুদ্র আকারে জনগনের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্যই কয়েকটি এলাকা নিয়ে গঠন করা হয়েছে বিট পুলিশিং কার্যক্রম। একজন বিট পুলিশিং কর্মকর্তা এলাকার মানুষের কাছে তাদের নিজেদের পুলিশ কর্মকর্তা বলেই প্রতীয়মান হবে। তিনি এলাকাবাসীদের সাথে সুখ-দুঃখের অংশীদার হবেন। তিনি এলাকায় কেবল আইন প্রয়োগ বা শৃঙ্খলা রক্ষা নয়, এলাকার সকল সমস্যা সমাধানের নিয়ামক শক্তি বা প্রভাবক হিসেবে কাজ করবেন। দেওয়ানী, ফৌজদারি, সামাজিক, পারিবারিক এমনকি রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও একজন বিট পুলিশিং অফিসারকে এগিয়ে আসতে হবে। অপরদিকে নগরীতে বিট পুলিশিং কার্যক্রমের ব্যাপারে একাধিক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব বলেন, বিট পুলিশিং যদি প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র আকারে প্রতিটি দুয়ারে তাদের পুলিশিং সেবা পৌঁছে দেয় তাহলে সমাজে একটি আমুল পরিবর্তন আসবে এবং পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস কিংবা নির্ভরশীলতা বহুলাংশে বেড়ে যাবে। যেমনটা হয়েছিল করোনাকালীন দুর্যোগের সময়। এদিকে বিট পুলিশিংয়ের কোন অফিসার যদি অনৈতিক সুবিধায় জড়িয়ে পরে তাহলে কি করে তা নিয়ন্ত্রণ হবে জানতে চাইলে বিএমপি কমিশনার পুনুরায় বলেন, প্রচলিত ব্যবস্থা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গৃহীত হবে। এই বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে মানুষ তার পুলিশিং সেবা পাওয়ার অধিকার সম্পর্কে আরে বেশি সচেতন হয়ে যাবে। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণকে পুলিশের কাছে আসতে না হয়। বরং পুলিশই জনগণের কাছে সেবা নিয়ে যাবে। আর সেই ব্যবস্থা হচ্ছে বিট পুলিশিং। বরিশাল নগরীতে বিট পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করে আমরা মানুষের কাছে যেতে চাই এবং তাদের সেবা দিয়ে ভালোবাসা ধরে রাখতে চাই।