বরিশাল মহানগর বিএনপি’র নতুন কমিটির আভাস

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৫:২৮, অক্টোবর ১৪ ২০২০ মিনিট

এস এন পলাশ ।। আন্দোলন ও সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ সব ক্ষেত্রেই কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং জবাবদিহিতা না থাকায় ব্যর্থতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ফলে এসব বিষয় সামনে রেখে বরিশাল মহানগর কমিটির সংস্কারের চিন্তা শুরু করছে দলের হাই কমান্ড। অপরদিকে দ্রুত কাউন্সিল করার জন্য সম্প্রতি মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রে চিঠি দেয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহানগর কমিটি ভেঙে দিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। ইতোমধ্যে দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও নগর কমিটির সংস্কারের প্রস্তাব আসছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর দিয়ে মহানগরের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর বরিশাল মহানগর। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মহানগর কমিটি গঠন করা হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ আরও এক নেতা বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে এসব কমিটি করা হবে। তার আগে প্রতিটি মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। এই কমিটি বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি সম্পন্ন করবে। এরপর মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। এদিকে বিভাগীয় শহর বরিশালে বিএনপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দীর্ঘ ৪ বছর আগে। টানা ৭ বছর ধরে চলা এই কমিটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ এখন শূন্য। সাধারণ সম্পাদক পদটি এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত নির্ভর। কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতা মারাও গেছেন। কেউ কেউ আবার রাজনীতি বিমুখ কিংবা বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে নতুন নেতৃত্ব পেতে মুখিয়ে আছেন নেতাকর্মীরা। ভেতরে ভেতরে চলছে নানা গ্রুপিং, লবিং, তদবির। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহানগর বিএনপি'র সর্বশেষ ২০০৯ সালে মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি ও কামরুল আহসান শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে বরিশাল মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় ২০১৩ সালের অক্টোবরে পুনরায় মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি ও কামরুল আহসান শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৪ সালে মারা যান সাধারণ সম্পাদক শাহিন। এরপর দলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দিয়েই চলছে। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেক জেলা ও মহানগর কমিটির মেয়াদ দুই বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। ব্যর্থ হলে যুক্তিসঙ্গত কারণে আরও তিন মাস মেয়াদ বাড়ানো যাবে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে পূর্ববর্তী কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে। এ সময়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের শর্তে তিন মাসের জন্য আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেবে কেন্দ্র। ওই কমিটিও কাউন্সিল করতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠন করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে দলের গঠনতন্ত্রে। বিএনপির কমিটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন নেতা জানান, মহানগর নেতারা নিজেদের মতো করে কমিটি গঠন করার প্রচেষ্টা চালায়। ফলে দলে নতুন করে কোন্দল ও বিভক্তি তৈরি হয়। আর এ কারণেই নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়না। তারা বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও নগর কমিটির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার একই সাথে দলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও তার নেতৃত্বে আন্দোলন কিংবা সাংগঠনিক কার্যক্রমের সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে বরিশাল বিএনপির মহানগর কমিটি। তিনি দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকেও আন্দোলন-সংগ্রামে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে না পারায় আস্তে আস্তে মহানগর বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক শাহেদ আকন সম্রাটও মারা গেছেন। দলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ মাহমুদ সিকদার দীর্ঘ বছর দলীয় কর্মকান্ড থেকে দূরে সরে আছেন। বেশ কয়েকজন সহ-সভাপতি ও সম্পাদকীয় পদের নেতা নানা কারণে রাজনীতি থেকে দূরে সরে আছেন। এসব কারণে নগর বিএনপিতে আজ চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দলীয় কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে দায়সারাভাবে। মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু বলেন, আমিও চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক। কেননা টানা ৭ বছরে কমপক্ষে ৩টি কমিটি আসার কথা। অথচ একটা কমিটি দিয়েই চলছে এখনো। তিনি বলেন, দলের অনেকে মারা গেছেন, অনেকে রাজনীতি করেন না, কারও কারও আবার বয়স হয়ে গেছে। এই কমিটি দিয়ে মহানগর বিএনপি চলে না বলে দাবি করেন তিনি। মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, নতুন কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দলে জন্য যারা নিবেদিতভাবে কাজ করেছে এবং সাংগঠনিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে সেসব ত্যাগী কর্মীরা এবারের কমিটিতে স্থান পাবে। কোন গ্রুপিং, লবিং কিংবা তদবিরে কাজ হবে না। দলের দুঃসময়ে যারা পাশে ছিল তারাই এবার কমিটিতে থাকবে। মহানগরে নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে মজিবুর রহমান সরোয়ার বলেন, গত ১০ দিন আগে আমরা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রে চিঠি দিয়েছি দ্রুত কাউন্সিল করার জন্য। যেহেতু কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। নতুন কাউন্সিলে কে নেতা হবেন তা নির্ধারণ করবে মহানগরের কাউন্সিলররা।