আপনি বিচারক না সিল মারা অফিসার?

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:৫৬, অক্টোবর ১১ ২০২০ মিনিট

ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার চার শিশুকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেয়া বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের তীব্র সমালোচনা করেছে হাইকোর্ট। তাকে ‘বিচারক’ নাকি ‘সিল মারা অফিসার’ বলা হবে, সে প্রশ্নও তুলেছেন একটি বেঞ্চের দুই বিচারক। রোববার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চে বরিশালের ওই বিচারক, বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চার শিশুকে হাজির করা হয়। এ সময় শিশুদেরকে গ্রেফতার এবং তাদের বিষয়ে বিচারক কোন বিবেচনায় আদেশ দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্টের দুই বিচারক। বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এনায়েত উল্লাহকে হাইকোর্টের বিচারক বলেন, ‘আপনাদের মতো সো কল্ড কিছু কর্মকর্তাদের কারণে এই বাচ্চাগুলোর বিকাশে যে মানসিক প্রভাব পড়েছে সেটা একবার চিন্তা করেছেন? আপনি কি পুলিশের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করছেন?’ ‘আপনি বাচ্চাদের দেখে আদেশ দিয়েছেন নাকি না দেখে দিয়েছেন’-বিচারিক আদালতের হাকিমকে জিজ্ঞেস করেন হাইকোর্টের বিচারক। তখন বিচারিক হাকিম বলেন, ‘দূরে থেকে দেখেছি।’ তখন আদালত বলে, ‘আপনাকে আমরা কী বলব? সিল মারা অফিসার না কি জুডিশিয়াল অফিসার? বাচ্চাদের বয়স, এজহার না পড়ে ভালো করে না দেখে সিল মেরে দিলেন!’ ওই শিশুদের গ্রেফতার করে থানায় মীমাংসা না করে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নিয়ে যাওয়ায় বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও ভর্ৎসনা করে আদালত। এর আগে আদালত চার শিশু ও তাদের অভিভাবক, বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম, থানার শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা এসআই বশির উদ্দিন খান, বরিশালের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজের বক্তব্য শোনেন ও তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। চার শিশুকেও খাস কামরায় নিয়ে তাদের বক্তব্য শোনেন। পরে চার শিশুর বিরুদ্ধে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। পাশাপাশি চার শিশুকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিতে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন অনুসরণ না করে চার শিশুর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া, তাদের গ্রেপ্তার করার বিষয়ে আগামী ২২ নভেম্বর পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য ঠিক করে দেয় হাইকোর্ট বেঞ্চ। ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত ৬ অক্টোবর মামলা করা হয়। এ মামলায় ওইদিনই চার শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৭ অক্টোবর বরিশালের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এনায়েত উল্লাহ আদেশে চার শিশুকে যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়। এই সংবাদ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আসে গত ৮ অক্টোবর রাতে। এরপর রাতেই বিচারপতিদ্বয় নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে ভার্চুয়াল আদালত বসিয়ে আদেশ দেন। আদেশে ওই রাতেই চার শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বরিশালের শিশু আদালতের বিচারকের প্রতি নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশে আজ তারা হাজির হন।