করেনার সময় ৫৩ শতাংশ পরিবার কম খেয়ে থেকেছে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:৪১, অক্টোবর ০৬ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ বিশ্বব্যাপী করোনার আঘাতও বাংলাদেশেও। মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) চলাকালীন ৬৮ শতাংশ ৩৯ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে অভিঘাতে আর্থিক সমস্যার শিকার হয়েছে। আর (এপ্রিল থেকে বর্তমান) দেশের প্রায় ৫২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পরিবার খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তবে এপ্রিল থেকে জুলাই সময়ে কর্মহীন ছিল ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ মানুষ বলে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বেকার সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। করোনাকালীন ‘জীবিকার উপর ধারণা জরিপ ২০২০’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আনুষ্টানিক ব্রিফিংএ বিবিএসের ‘জীবিকার উপর ধারণা জরিপ ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপ তুলে দরেন। এ সময় এসআইডি সচিবও উপস্থিত ছিলেন। দৈব চয়নের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৪০টি মোবাইল ফোন নম্বর নির্বাচন করে এ জরিপ করা হয়েছে। বিবিএসের জরীপ বলেন, করোনার সময় প্রায় ৫২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পরিবার/খানা কোনো না কোনোভাবে খাদ্যদ্রব্য ভোগের পরিমাণ ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় কমিয়েছে। তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ পরিবার বা খানা মাসিক আয় কমার কারণে খাদ্যদ্রব্য ভোগের পরিমাণ কমিয়েছে বলে মত প্রকাশ করে। এচাড়া চলতি বছরের মার্চ মাসের তুলনায় আগস্টে পরিবার বা খানাগুলোর মাসিক গড় আয় আনুমানিক ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে মাসিক গড় ব্যয় মাত্র ৬ দশমিক ১৪ কমেছে। গড় আয়ের তুলনায় গড় ব্যয় কমেছে অনেক কম। বিবিএস বরছে, শতকরা প্রায় ৬৮ দশমিক ৩৯ ভাগ পরিবার বা খানা কোনো না কোনোভাবে করোনার অভিঘাতে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে রিকশা বা ভ্যানচালক ও দিনমজুররা অধিক মাত্রায় আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছেন। করোনাকালীন আর্থিক সংকট মোকাবিলায় প্রায় ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পরিবার বা খানা সরকারি সহায়তা বা ত্রাণ গ্রহণ করেছে। সরকারি সহায়তা বা ত্রাণ গ্রহণকারী এ খানা বা পরিবারগুলোর ৯৮ দশমিক ৪৪ শতাংশের আগস্ট মাসে এবং ৮২ দশমিক ৬৪ শতাংশের মার্চ মাসের গড় আয় ছিল ২০ হাজার টাকা বা তার কম। এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সরকারি সহায়তা বা ত্রাণ বেশিরভাগ নিম্নআয়ের পরিবার/খানাগুলো পেয়েছে বলে বিবিএসের দাবি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ (১০ দশমিক ২৩ শতাংশ), এপ্রিল-জুলাই (৯ দশমিক ২২ শতাংশ) এবং সেপ্টেম্বর (১০ দশমিক ১৩ শতাংশ) মাসে কৃষিজীবীর সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। মার্চ মাসে ব্যবসায়ীর ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ সংখ্যা এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে কমেছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। তবে এ সংখ্যা সেপ্টেম্বর মাসে পুনরায় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। একইভাবে দিনমজুরের সংখ্যা মার্চ মাসে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ থেকে এপ্রিল-জুলাইয়ে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে। সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশে পেশাজীবীর সংখ্যা প্রায় মহামারির আগের অবস্থানে ফেরত এসেছে। মার্চে বেকার/কর্মহীনের শতকরা হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও এপ্রিল-জুলাইয়ে এ হার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে এ হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে বিবিএস বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে একটি গতিশীল শ্রমবাজার বিদ্যমান রয়েছে। যা অত্যন্ত ইতিবাচক। অর্থাৎ বর্তমানে আমরা করোনা মহামারির অভিঘাত ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠছি। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির এই সময় ৪৬ শতাংশ মানুষ নিজেদের সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছে। স্বজন, বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েও জীবন ধারণ করেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কোভিডের অভিঘাত সারা বিশ্বের মতোই আমাদের দেশেও পড়েছে। এই প্রভাব কতটা পড়েছে তা বের করতেই প্রথমবারের মতো এই ধারণা জরিপ পরিচালনা করেছে বিবিএস। এটা একটি ভালো উদ্যোগ।