বাকেরগঞ্জ এমপির এপিএস প্রতারক নয়নের কোটিপতির মিশন

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০২:০৭, অক্টোবর ০৬ ২০২০ মিনিট

বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ চাঁদাবাজী, প্রতারণা, চাকুরী দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্মের হোতা নয়নের আমলনামা বেরিয়ে পড়ছে। হঠাৎ করেই আঙুলফুলে কলাগাছ হওয়া দুর্ধর্ষ প্রতারক সেই নয়নের অপকর্মের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করায় স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এতে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসায় দিশেহারা হয়ে পড়ছে প্রতারক নয়ন। সূত্রে জানা যায়, বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের কানকী-কৃষ্ণকাঠী গ্রামের গগণ হাওলাদারের পুত্র নয়নের পুরো নাম রিয়াজুল ইসলাম নয়ন। তিনি স্থানীয় এমপি’র নাতি এবং ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। চাঁদাবাজী, প্রতারণা, চাকুরী দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎসহ তার নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে বাকেরগঞ্জ থানায় ও বরিশালের আদালতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০টি মামলার অভিযোগ জমা পড়েছে। অপকর্মে ফেঁসে যাওয়া ঠেকাতে ইতোমধ্যে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। মামলা এবং ভুক্তভোগী সূত্র জানায়, হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো ধনকুবের বনে গেছেন নয়ন। অগুণতি টাকার মালিক, নিজ গ্রামের বিলাসী বাড়িতে সানবাঁধানো ঘাট, নামে-বেনামে ব্যবসা-বাণিজ্য, কয়েক কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, বরিশাল শহরের রূপাতলী হাউজিংয়ে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের এবং বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকায় ২৬ লক্ষ টাকা মূল্যের জমি। এছাড়াও নিজ মামাকে দিয়ে পটুয়াখালীর দুমকীতে কোটি টাকার ইট-বালুর ব্যবসা, ভিআইপিদের সাথে মা-বাবাকে নিয়ে ২ বার এবং নিজে ৩ বার অবৈধ টাকায় হজ পালন করেছে। এদিকে নয়নের অঢেল সম্পদের উৎস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে নেপথ্যের রহস্য। সূত্র জানায়, উপজেলার কলসকাঠী বাজারের ২৬ লাখ টাকার ইজারা গুছপ্রক্রিয়ায় লুফে নেন তিনি। পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড এলাকায় অর্ধ কোটি টাকার জমি প্রভাব খাটিয়ে ২৬ লাখ টাকায় দলিল করে নিয়েছেন। ত্রাণ প্রকল্পের দেড় কোটি টাকার ৫টি ব্রিজের কাজ বাগিয়ে নিয়ে টাকা আত্মসাৎ, মা এবং বাবাকে ভূমিহীন সাজিয়ে উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের দুধলমৌ এলাকার ৬০ শতাংশ খাস জমি গ্রাস করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কয়েক লাখ টাকা। এছাড়া বিগত দু’বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে এই দুর্ধর্ষ প্রতারক নয়ন হাতিয়ে নিয়েছে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা। উপজেলার শতাধিক পরিবারের লোকের নিকট থেকে প্রতারণা করে এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। উপজেলার ঢাপরকাঠী গ্রামের নূরুল ইসলাম মোল্লার পুত্র আলমাস মোল্লার নিকট থেকে চাকুরির প্রলোভনে ৪ লাখ টাকা নেয়া হয়। এ ঘটনায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং- জিআর-২৩২। উপজেলার দুধল ইউনিয়নের গোমা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম মোল্লার পুত্র সজিব মোল্লার নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা,দাঁড়িয়াল ইউনিয়নের বালিয়ারহাটের মোকলেছ মোল্লার ছেলে সবুজ মোল্লার থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়ে চাকরি আর দেইনি, ফরিদপুর ইউনিয়নের সবুজ হাওলাদারের নিকট থেকে ২ লাখ টাকাসহ উপজেলার অসংখ্য মানুষের নিকট হতে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার কলসকাঠীর বালু ব্যবসায়ি বায়েজিদ হোসেন সোহাগ খানের নিকট ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন নয়ন। তার নিকট থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ আদায় করা হয়েছে। এঘটনায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার নং- জিআর-২৩৩।এরকম অন্তহীন অপকর্ম ছাড়াও স্থানীয় এমপি’র নাম ভাঙিয়ে টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ বিভিন্ন ত্রাণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই নয়ন ওরফে রিয়াজুল ইসলাম নয়ন। এবিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম অভিযুক্ত রিয়াজুল ইসলাম নয়নের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, প্রতারণাসহ একাধিক মমলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বেগম নাসরিন জাহান রতনা এমপি জানান, অপরাধীকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। বরং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।