কোটি টাকা আত্মসাত করলেন পেশকার শাহীন

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:০৪, অক্টোবর ০৫ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস যেন অবৈধ অর্থ উপার্জনের খাত। গেল কয়েক বছরে নকলনবীশদের নামে ভুয়া বিল জমা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অসাধু কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা পেশকার শাহীনসহ কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। ভূয়া বিলের কাগজ তৈরি করে সকল নকলনবীশদের সাইন নেয় পেশকার শাহিন। কিন্তু নকলনবীশদের নামে যে বিল দেখানো হয়েছে তা তারা পায়নি। বরং ভূয়া বিলের পুরো টাকাই আত্মসাত করেছে শাহীন গংরা। সরকারের ওই টাকা আত্মসাত করে পেশকার শাহীন ও সাব-রেজিস্ট্রারসহ অনেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আর ভূয়া বিলের বোঝা এখন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে নকলনবীশদের মাথায়। যে কারনে তারা এখন চাকুরী হারাতে বসেছেন। এদিকে নকল নবীশদের নামে ভূয়া বিলের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নকলনবীশরা। তারা বলেন, আমাদের নামে ভূয়া বিল করে বছরে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে অফিসের কিছু চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা। তারা বলেন, আমাদের নামে ভূয়া বিল হয় আমরা জানি না। বরিশাল জেলা নকলনবীশ এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও সম্পাদক মাহবুব হোসেন বলেন, পেশকার শাহিন ভূয়া বিলের কাগজ তৈরি করে সকল নকলনবীশদের সাইন নেন আর এই কাগজ কম্পোজ করেন নকলনবীশ আসাদ ওরফে সোহেল। সুচতুর শাহীন নকলনবীশদের সাইন নিয়ে ইচ্ছামতো ভূয়া বিল বানিয়ে শাহিন ও আসাদ গংরা সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করেই চলেছেন। আশ্চর্য হলেও সত্যি পেশকার শাহিন প্রায় এক যুগ যাবৎ নকলনবীশদের বিলে সাইন করানোর দায়িত্ব পালন করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, পেশকারের চাকরি করেই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। জেলা শহরে রয়েছে তার তিন বাড়ি। এদিকে অফিস সূত্রে জানা যায়, যে সকল নকলনবীশদের নামে ভূয়া বিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে মনিকা রানী দাসের নামে ৯ শত টাকার বিলের পরির্বতে ৭ হাজার ৯ শত টাকার ভূয়া বিল করা হয়েছে। একইভাবে জেমির নামে ১৯ শত টাকার পরির্বতে ১৯ হাজার টাকা, রোকছনার নামে ১২ শত টাকার পরির্বতে ১২ হাজার টাকা, রোকেয়ার নামে ৬ শত টাকার পরির্বতে ১৬ হাজার টাকা, লিজা আক্তার মনির নামে ১২ হাজার টাকা, আছিয়ার নামে ২৬ শত টাকার পরির্বতে ৪ হাজার ৮শত টাকার ভূয়া বিল দেখিয়ে উত্তোলিত কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও অনুপস্থিত কিছু নকলনবীশদের বেতন তাদের নাম দেখিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তাছলিমা আক্তারের ২৬৭৬৪ টাকা, রাসেল হাওলাদারের ২০২৫৬ টাকা, সালমা খানমের ২২৩৪৪ টাকা, লাভলী আক্তারের ২৩৭৬৭ টাকা এবং মোঃ গফফারের ৭১৫২ টাকা। এহেন দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে সদর সাব-রেজিস্টার মোঃ ইউছুফ আলী মিয়া বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি তাই তদন্ত ছাড়া এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবনা। সরকারের ওই টাকা উদ্ধারে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি দুদক। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দুর্নীতিবাজদের বাঁচাতে তদবিরের প্রক্রিয়া। দফায় দফায় চলছে নকল নবীশদের নিয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের গোপন মিটিং। এমনও শোনা যায়, অফিসের দুর্নীতির বিষয়ে বাহিরের লোকে যেনো না জানে, এমনকি সাংবাদিকদের সাথে কেউ কথা না বলে তা নিয়ে সক্রিয় একটি মহল। এদিকে অনিয়মে অভিযুক্ত নকলনবীশ আসাদ হোসেন (সোহেল) পলাতক। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পেশকার শাহিনের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি নিয়মিত অফিস করছে। শাহিন বলেন, আমার কোনো বিল কাগজে স্বাক্ষর নেই। কোন প্রকার অভিযোগ মানতে নারাজ পেশকার শাহিন। নকলনবীশ থেকে শুরু করে দলিল লেখক পর্যন্ত শাহিনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। নিজেকে বাঁচাতে শাহিন নানান কৌশল অবলম্বন করে চলছে। তবে সবাই শাহিনসহ দুর্নীতির সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। অনিয়মের বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার পথিক কুমার সাহা বলেন, দ্রুত তদন্ত কমিটি করে দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরোও বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। (চলবে)