বরিশাল নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উঠতি সন্ত্রাসীরা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:১১, অক্টোবর ০৫ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে ভয়ঙ্কর রূপে তৎপরতা চালাচ্ছে উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নামে নামে এসব উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বাহিনী। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদকের সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই-এহেন অপকর্ম নেই, যা তারা করছে না। এসব সন্ত্রাসীর নামে কোতয়ালী থানাসহ আশপাশের থানায় নানা অভিযোগ আর মামলা রয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি এরা সংশ্লিষ্ট এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় মোটরসাইকেলসহ বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। স্থানীয়রা জানায়, নগরীর ১০নং ওয়ার্ডের কেডিসি বালুরমাঠ এলাকায় সাবেক কাউন্সিলর জয়নালের ছেলে এনার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। বাহিনীর অন্যান্য সদস্যের মধ্যে অন্যতম হারুনের ছেলে রাব্বি। তিনি এনা’র বিশ্বস্ত সহযোগী। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে এনা’র ডান হাত হিসেবে বেশ পরিচিতি রয়েছে রাব্বির। এছাড়াও এই এনা বাহিনী’র অন্য সদস্যরা হলো শংকর, ইয়াকুবের ছেলে সম্রাট, নাছিমের ছেলে রোকন, আরমান ও নাঈমসহ প্রায় ১৫/২০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত। ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশের মদদে টেন্ডারবাজি, খুন-খারাবি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত এই এনা বাহিনী। এলাকাবাসী জানান, কেডিসি এলাকায় সন্ধ্যা হলেই এসব উঠতি সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে আবার ঘুরে ঘুরে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য বিক্রি করে। এছাড়া নগরীর চিহ্নিত অনেক মাদক ব্যবসায়ী এসব উঠতি অপরাধীকে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহার করে থাকে। প্রায়ই মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্ব নিয়ে উঠতি সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতেও জড়ায়। বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, উঠতি মাস্তানদের মধ্যে অনেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অপরিচিত মুখ। ফলে তাদের গ্রেফতারে সফল হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ব্যাপারে ১০ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ওয়ার্ডে কমিউনিটি পুলিশিং কিংবা বিট পুলিশিংয়ের কোন কার্যক্রম না থাকায় তৎপর রয়েছে এসব অবৈধ কার্যক্রমের হোতারা। তবে 'সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন, কেউ ছাড় পাবে না। নগরীর অমৃত লাল দে কলেজ ও হাসপাতাল রোড এলাকায় রয়েছে আরো দুটি গ্রুপ। একটির নেতৃত্ব দেয় বাসুদেবের ছেলে তুর্য। তার রয়েছে বিশাল গ্যাং বাহিনী। করোনা মহামারীতে কলেজ বন্ধ থাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অমৃত লাল কলেজের সাইকেল স্ট্যান্ড ও কলেজের ভিতরে তুর্যর নেতৃত্ব বসে মাদকের হাট। এই গ্যাং বাহিনীর উঠতি ও ছিচকে মাস্তানদের বেশির ভাগই বখাটে হলেও কিশোর সন্ত্রাসীদের প্রায় সবাই বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্র। এরা একদিকে ক্রমাগত নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, আবার এদের দ্বারা সহপাঠীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ক্রমাগত নিগ্রহেরও শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরাও ক্রমাগত ইভটিজিংয়ের শিকার হলেও তার তেমন কোনো প্রতিকার নেই। এমনকি খোদ বরিশাল মহানগরীতে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীরা পর্যন্ত তাদের সহপাঠীদের দ্বারা নানা ধরনের উৎপীড়নসহ নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন বলে চাপা ক্ষোভসহ হতাশাও বাড়ছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। একইভাবে নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে রয়েছে রাকিব ও উত্তম বাহিনী। ১০/১২ জনের এই সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান রাকিব ওরফে গুটি রাকিব। নগরীর রুইয়ার পুল এলাকায় তালুকদার বাড়ির আব্দুর রাজ্জাক তালুকদারের ছেলে তিনি। অত্র এলাকায় চিহ্নিত মাদকসেবী ও বিক্রেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি একাধিক মাদক মামলার আসামী। ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্র-ছায়ায় কলেজ এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করে চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অবৈধভাবে ভর্তি বানিজ্য, নতুন ছাত্রদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়, ছাত্রীদের উৎপীড়ন ও শিক্ষক-কর্মচারীদের মারধরসহ নানা অভিযোগ থাকলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করত না। তবে কিছুদিন আগে ওই কলেজর প্রধান অফিস সহকারী সুমনকে মারধরের ঘটনার পর থেকেই এই বাহিনীর নাম প্রকাশ্যে আসে। এ ব্যাপারে রাকিবের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় মামলা হলেও অদৃশ্য ক্ষমতার বলে এখনো সে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। রাকিবকে আটক করতে কেনো সক্ষম হয়নি জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মেহেদি হাসান বলেন, অভিযান অব্যাহত আছে, আশা করি অচিরেই ধরা পড়বে। অপরদিকে নগরীর নতুন বাজার আদি শসান ঘাট এলাকার ল্যাংরা কাদেরর ছেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ইব্রাহিমের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি গ্যাং বাহিনী। এলাকায় মাদকের বড় একটি সিন্ডিকেট রয়েছে তার দখলে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মনজুর রহমান বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই এই উঠতি সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছি এবং আশা করি শীঘ্রই এর একটি ফলাফল প্রতিয়মান হবে। এসব বেপরোয়া অনৈতিক কর্মকান্ডে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মন্ডলীসহ অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমশ বাড়ছে। বেশির ভাগ ছাত্রীও উদ্বিগ্ন। পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকেও মাঝেমধ্যে নানা অভয় বাণী প্রদান করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে- কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কথাও। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি এখনো দৃশ্যমান নয়। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, 'সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন, যে দলেরই হোক না কেন, রক্ষা নেই। পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। অভিযান চলবে।' পরবর্তী পর্বে নগরীর আরো কিছু উঠতি সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। জানতে দেশ জনপদের সাথেই থাকুন।