‘কনডেম সেলে’ বন্দি মিন্নির ফাঁসি হবে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:৩১, অক্টোবর ০২ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গত বুধবার এ রায় ঘোষণার পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের কারাগারের ‘কনডেম সেল’ এ রাখা হয়েছে। গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন আসামি। এ মামলায় স্বাক্ষী থেকে আসামি হওয়ার নিহত রিফাতের স্ত্রীর এ হত্যাকাণ্ডের একমাত্র মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আদালত। উচ্চ আদালতে দণ্ড পরিবর্তিনের সুযোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে এখনো বহু নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি। মাঝেমধ্যে দেখা যায় কোনো একটি বিচারিক আদালতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হলেও পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রায়ে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ পরিবর্তিত হয়েছে। বাংলাদেশে এই ধরণের বেশকিছু ঘটনা রয়েছে যেখানে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করার পর তার সাজা কমেছে বা মওকুফ হয়েছে। আর এই ধরনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত দীর্ঘসময় লেগে থাকে বলে মন্তব্য করেন শামসুল হায়দার সিদ্দিকী। এসব ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের রায় উচ্চতর আদালত থেকে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কনডেম সেলেই থাকতে হয় বন্দীকে। সাবেক কারা উপ-মহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার বলেন, যতদিন পর্যন্ত উচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বাতিল না করছে, ততদিন পর্যন্ত এ বন্দীকে কনডেম সেলেই থাকতে হয়। কারা বিধি অনুসরণ করে কনডেম সেল থেকে গিয়েই আদালতের কার্যক্রমে যোগ দিতে হয় বন্দীকে। আর এ রকম অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে বন্দীকে বছরের পর বছর কনডেম সেলে থাকতে হচ্ছে। বাংলাদেশে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো বন্দীর কনডেম সেলে থাকার নজির আছে বলে জানান হায়দার সিদ্দিকী। কারা সূত্রে জানা গেছে, কারাগারগুলোতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নারীদের মধ্যে কেউ কেউ ১০-১৫ বছর ধরে কনডেম সেলের বাসিন্দা। দেশে বহু পুরুষ আসামির ফাঁসি কার্যকর হলেও কোনো নারী আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে এক কারারক্ষী জানান, তিনি ২৮ বছর ধরে চাকরি করছেন, আজ পর্যন্ত কোনো নারী আসামির ফাঁসি হয়েছে, এমন কথা তিনি শোনেননি। ২০০৭ সালে কাশিমপুরে একমাত্র মহিলা কারাগার উদ্বোধন করা হয়। দেশের প্রতিটি কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ থাকলেও সেখানে কোনো ফাঁসির মঞ্চ নেই। জানা গেছে, অতীতে কোনো নারী আসামির ফাঁসি কার্যকরের রেকর্ড না থাকায় ফাঁসির মঞ্চ বানানো হয়নি। নিয়মানুযায়ী ফাঁসির আসামিরা সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি তাদের ক্ষমা না করলে ফাঁসি থেকে বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। তবে আজ পর্যন্ত কোনো নারীর আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে গেছে, এমন খবরও শোনা যায়নি।