‘ধর্ষকদের’ পক্ষে দাঁড়াননি কেউ, সিলেটে প্রশংসায় ভাসছেন আইনজীবীরা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:১৮, সেপ্টেম্বর ২৮ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নববধূ গণধর্ষণের মামলায় গ্রেফতারকৃত ছয় জনের মধ্যে তিন আসামিকে গতকাল সোমবার আদালতে নিয়ে আসার পর তাদের পক্ষে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী। এতে সকল শ্রেণির মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন সিলেটের আইজীবিরা। সোমবার দুপুরে দুই জন ও বিকেলে এক আসামিকে সিলেট মহানগর হাকিম দ্বিতীয় আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মো. সাইফুর রহমান তাদের পাঁচ দিন করে এই তিন জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামীরা হলেন ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও এমসি কলেজ শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি রবিউল হাসান। আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট খোকন কুমার দত্ত জানান, আদালতে জামিন শুনানিতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী অংশ নেননি। এদিকে, ‘ধর্ষকদের’ পক্ষে সোমবার সিলেটের কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোতে সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন তারা। দুপুরের পর থেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিলেটের আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন অনেকে। এসব স্ট্যাটাসে আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি ‘ধর্ষকদের’ দ্রুত এবং সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছেন সবাই। আসামিদের পক্ষে আদালতে কেউ না দাঁড়ানোর বিষয়ে সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ জানান, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে না নিলেও প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি-এই মামলার কোনো বিবাদীর পক্ষে লড়বো না। তবে বাদিপক্ষ যদি কোনো আইনি সহায়তা আমাদের কাছে চান তবে আমরা মানবিকতার দায়ে তা দিতে প্রস্তুত। অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ আরও বলেন, মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় আসামিদের পক্ষেও আদালত একটা সময় আইনজীবী নির্ধারণ করে। এটিকে আইনি ভাষায় ‘স্ট্যাট ডিফেন্স’ বলে। তবে এ মামলার ক্ষেত্রে এমন পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। আর এ ক্ষেত্রে সব আইনজীবী যে আসামিদের পক্ষে লড়বেন, এমন কথাও নয়। মোটকথা, এই অভিযুক্তদের পক্ষে সিলেটের কোনো আইনজীবীই লড়তে রাজি নন। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই গৃহবধূকে জোর করে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে আটকে রাখে দুজন। এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখনও পলাতক রয়েছেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫) ও তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮)। তাদের গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।