আখের বাম্পার ফলনেও চাষীর লাভ পাইকারের পকেটে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:৫২, সেপ্টেম্বর ২৪ ২০২০ মিনিট

ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলার বোরহানউদ্দিনে চলমান করোনাকালে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ফলন ভালো হলেও করোনায় বাজার পরিস্থিতির নিম্নমুখীর আশঙ্কায় আখ খেতে রেখেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে চাষীরা। এখন পাইকাররা খেত থেকে আখ তুলে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন। ফলে আখ চাষীদের করোনা আতঙ্কে চলমান বাজার মূল্যের লাভ পাইকারদের পকেটে চলে গেছে। কৃষি অফিসের ভাষ্য, এ বছর উপজেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন চিবিয়ে খাওয়া আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৪৫ মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া অনুকূল আবহাওয়া, সঠিক পরিচর্জার কারণে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সুগার গ্র“প গবেষণা ইন্সটিটিউটের সরেজমিন বিভাগ চিবিয়ে খাওয়া আখ চাষের ওপর ৬০ জন চাষীকে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করেছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, কিছু এলাকায় কারণে যথাসময়ে ছত্রাকজনিত রোগ রেড রটের (লাল পচা) ওষুধ না দেয়ায় ওই আখ বিভিন্নস্থানে লাল রঙ হয়ে যায়। তবে অধিকাংশ আখ চাষীরা জানান, গত বছরের অভিজ্ঞতায় তারা যথাসময়ে কীটনাশক ব্যবহার করেছেন। পাশাপাশি মাজরা পোকার আক্রমণ এবার বেশি ছিল। এজন্য ওষুধ খরচ একটু বেশি হয়েছে। উপজেলার সব এলাকায় আখ চাষ হলেও এর সিংহভাগ উৎপাদন হয় বড়মানিকা ও কুতুবা ইউনিয়নের। বড়মানিকা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বর্গা চাষী ইসহাক, খোরশেদ আলম, আবদুল মালেক ও কামাল হোসেন জানান, বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউটের সরেজমিন বিভাগ গত বছরের পৌষ মাসে রঙ বিলাস ও অমৃত জাতের বীজ আখ সরবরাহ করেছে। এছাড়া তারা নিজেরা সংগ্রহ করে সিও-২০৮ জাতের আখ ও বোম্বাই-২০৮ জাতের চাষ করেছেন। আখ চাষী মো. ইসহাক জানান, ৪৪ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করে তার ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পুরো খেত তিনি ঠিকা ১ লাখ ২১ হাজার টাকায় বিক্রি করে ফেলেছেন। মোঃ রেশাদ আলী ৪০ শতাংশে আখ চাষ করে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। বিক্রি করেছেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। ৫৪ শতাংশ চাষ করে আবদুল মালেক ও কামাল হোসেন উভয়ের খরচ পড়েছে ৬৮ হাজার টাকা, বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কুতুবা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ছোটমানিকা গ্রামের আখ চাষী জামাল দালাল ৪৮ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করে খরচ পড়েছে ৬০ হাজার টাকা, বিক্রি করেছেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকায়। ৪০ শতাংশে আখ চাষ করে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে হাবিব ফরাজীর, বিক্রি হয়েছে ৯০ হাজার টাকায়। চাষী রেশাদ আলী, ইসহাক, হোসেন মোল্লা জানান, করোনার কারণে বাজার কী হয় এ আশঙ্কায় প্রতি ৪ শতাংশের যে আখ আমরা ১০-১১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি তা এখন পাইকারা ২০-২২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। কৃষকরা আরও জানান, কৃষি অফিসের লোকজন তাদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন। বড়মানিকা ইউনিয়ন অংশের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন ও কুতুবা ছাগলা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ ফাহিম জানান, আখ চাষীদের পাশে থেকে সব সহায়তা করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, আখ চাষে ঝুঁকি কম, মূলধন কম কিন্তু লাভ বেশি। এছাড়া একটা পর্যায় পর্যন্ত এর সঙ্গে একাধিক সাথী ফসল করা যায়। বর্তমানে চিবিয়ে খাওয়া জাতের আখ চাষকে জনপ্রিয় করতে উদ্বুদ্ধকরণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।