সরকারি খাদ্য গুদামের চাল কালোবাজারে বিক্রি

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:৫০, সেপ্টেম্বর ২২ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর ত্রিশ গোডাউন থেকে সরকারি খাদ্য গুদামের চাল সরাসরি কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা খাদ্য দপ্তরের গোডাউন ইনচার্জ লিয়াকত ও নেছার গংরা। সরেজমনিসূত্রে, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটায় গোডাউন ইনচার্জ লিয়াকত তার দ্বায়িত্বে থাকা গোডাউন থেকে চাল ট্রাকে ওঠানামা করার সময় সৈকত নামে এক ক্রেতার কাছে চাল বিক্রি করে। সাদা একটি বস্তায় ক্রয়কৃত চাল নিয়ে গোডাউন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি প্রতিবেদকের নজরে আসলে চাল নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উক্ত ক্রেতা সৈকত বলেন, আমি চাল কিনেছি। কোন জায়গা থেকে কিনেছেন? এখানে তো সরকারি চাউলের গোডাউন, ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ নেই। তাহলে আপনি চাল কিভাবে কিনলেন জানতে চাইলে সৈকত আরো বলেন, আমরাতো আরো অনেকবার কিনেছি এবং অনেকেই এখান থেকে চাল কিনে নেয় বলে চলে যান। অপরদিকে গোডাউন থেকে সরাসরি চাল বিক্রির ব্যাপারে গোডাউন ইনচার্জ লিয়াকত বলেন, আপনারা নিউজ করেন কোন ব্যাপার না। এগুলো স্যারেরাও জানে। আর যে চালগুলো নিয়ে যেতে দেখেছেন তা মাটিতে পরে যাওয়া চাল, যা মানবতার খাতিরে মানুষকে দেয়া হয় বলে বিক্রির বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে এ ব্যাপারে অপর গোডাউন ইনচার্জ নেছার বলেন, যার গোডাউন থেকে বিক্রি হয়েছে আপনি তার সাথে কথা বলেন। আমার গোডাউন থেকে এরকম হয় না। সূত্র জানায়, নিয়ম হচ্ছে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতি মাসে কমপক্ষে দু’বার গুদামের মজুদ পরিস্থিতি তদারকি রিপোর্ট দেবেন বিভাগীয় কর্মকর্তার দফতরে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসবে কেন্দ্রে। কিন্তু নিয়মিতভাবে কাজটি করা হয় না। অনেক এলাকার খাদ্যগুদাম কয়েক বছরে একবার পরীক্ষা না করার নজিরও আছে। কেন তদারকি রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে না, এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অধিকাংশ সময় কোনো প্রশ্নও করা হয় না। ওইসব গুদামের মজুদ থেকে চাল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আবার অবস্থা বেগতিকের পূর্বাভাস পাওয়া মাত্র বাজার থেকে কিনে হিসাব মেলানোর ঘটনাও ঘটে। সব গুদামে মজুদ এবং গুদাম থেকে বের করা এবং প্রবেশ সংক্রান্ত হিসাব কাগজপত্রে ঠিক রাখা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গেলে তাদের প্রথমে খাতাপত্র দেখিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। এরপর সরেজমিন মজুদ দেখতে চাইলে গুদামের সামনের দিকে দেখানো হয়। অনুসন্ধানসূত্র আরো জানাযায়, গোডাউন থেকে চাল বিক্রির ব্যাপারটি নতুন কিছু না। খুচুনি দিয়ে (পাইপ দিয়ে তৈরী সুচালো) বস্তা থেকে চাল সুকৌশলে বের করে নির্দিষ্ট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। কালোবাজারে চাল বিক্রির এমন চালচিত্র নতুন কিছু নয় বরং এহেন কর্মকান্ড নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমসহ টিভি চ্যানেলগুলোতেও বহুবার খবর প্রকাশিত হয়েছে। আর কালোবাজারির এ চাউলের ক্রেতা হলো পরিবহন শ্রমিক, চাল ওঠানো-নামানোর শ্রমিকসহ স্থানীয় কতিপয়রা। শেষ বিকেলে ও রাতে এ চাল বিক্রির মোক্ষম সময়। কারণ স্থানীয় ও সংবাদমাধ্যমের তোপের মুখে যাতে পরতে না হয় সে লক্ষ্যেই এই সময়ে গোডাউন থেকে চাল কালোবাজারিতে বিক্রি করে লিয়াকত গংরা। এ ব্যাপারে ত্রিশ গোডাউনের ব্যবস্থাপক আয়েশা খাতুন বলেন, আমার এখানে কেউ অনিয়ম করে কিনা জানি না। আমি বেতন যা পাই তা দিয়েই দিন যাপন করি। কোন প্রকার এদিক সেদিক করি না। তাহলে আপনার কক্ষের সামনে গোডাউনে চাল ওঠা-নামা হয় এবং তখন গোডাউন ইনচার্জ লিয়াকত গংরা চাল কালোবাজারে বিক্রি করে তা কি আপনার দৃষ্টিগোচর হয়না বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো আমি জানিনা। আপনি স্যারের (আঞ্চলিক কর্মকর্তা) সাথে কথা বলেন। এদিকে সরকারি গোডাউন থেকে চাল বিক্রির কোন সুযোগ আছে কিনা বিষয়টি নিয়ে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, সরকারি গোডাউন থেকে চাল বিক্রির কোন সুযোগ নেই বরং এটি অপরাধ। তিনি বলেন, যারাই খাদ্যশস্য নিয়ে দুর্নীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত। এরা অতীতেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, এখনও আছে। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ ফৌজদারি মামলা দেয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি চাল নিয়ে নয়-ছয় করার কোন সুযোগ নেই। সূত্রে আরো জানা গেছে, হতদরিদ্রদের সহায়তা ও সুলভ মুল্যে দরিদ্রদের মাঝে চাল বিক্রির জন্য প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার চাল সরবরাহ করে খাদ্যগুদামগুলোতে। এরপর জেলা-উপজেলাগুলোতে তা ডিলার বা সরাসরি সরকারি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে পরিচালিত ত্রিশ গোডাউনের মধ্যে সাইলোর জন্য ১৩টি গোডাউন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং বাকি ২টি গোডাউন টিসিবির জন্য ভাড়ায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকি গুদামগুলোতে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের চাল গুদামজাত করা হয়। একেকটি গোডাউনের ধারণ ক্ষমতা হলো সাড়ে সাতশ থেকে ৬ হাজার টন পর্যন্ত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে চাল গুদামজাত ও সরবরাহ করা হয় এই গোডাউনগুলো থেকে।